প্রবন্ধ রচনা : সবার জন্য বিদ্যুৎ
সবার জন্য বিদ্যুৎ
ভূমিকা : বিজ্ঞানের যে আবিষ্কারটি গোটা মানব সভ্যতাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে বিদ্যুৎ। যন্ত্রশিল্পের প্রাণশক্তির অবিকল্প উৎস হলো বিদ্যুৎ। আর কে না জানে যে, যন্ত্রশিল্পে যে দেশ যত বেশি সমৃদ্ধ, উন্নতির মানদণ্ডে সে দেশ তত বেশি অগ্রসর। অনিবার্য সত্য এই, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতির প্রধান শর্তই হলো বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় স্বনির্ভরতা অর্জন। রূপকল্প অনুসারে, ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই বর্ধিত চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে ।
জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ : কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রাণশক্তি ও মুখ্য উপকরণ হলো জ্বালানি। যন্ত্রশিল্পে জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহৃত হলেও উন্নততর ও সহজে ব্যবহার্য জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুতের কোন তুলনা নেই। অবশ্য বিদ্যুৎ পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির মতো প্রাথমিক জ্বালানি নয়; উপর্যুক্ত জ্বালানিসমূহকে যন্ত্রশিল্পে ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত দ্বিতীয় স্তরের জ্বালানি হলো বিদ্যুৎ । তবে এর ব্যবহার সহজ ও বহুমাত্রিক – বিদ্যুৎ শক্তিকে খুব সহজেই আলোকশক্তি, তাপশক্তি, শব্দশক্তি, চৌম্বকশক্তি প্রভৃতিতে রূপান্তর করা সম্ভব। যন্ত্রশিল্পের সক্রিয়তা তো শক্তির এই রূপান্তরেই। বিদ্যুতের ব্যবহারে তাই সুইচ টিপলেই আলো জ্বলে; ইস্ত্রি, বৈদ্যুতিক চুলা ইত্যাদি যন্ত্রে তাপ উৎপাদন হয়; ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটরে তাপ শোষণে দ্রব্য ও স্থান শীতল হয়; টেলিফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি যন্ত্রে চৌম্বক শক্তিতে রূপান্তরণের মাধ্যমে শব্দময় ও দৃশ্যময় হয়ে ওঠে ।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার – অতীত পরিপ্রেক্ষিত : নিকট অতীত পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল নিতান্তই কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশের পেশা ছিল কৃষি। কৃষিকাজ ছিল মান্ধাতার আমলের- লাঙল আর প্রকৃতির খেয়াল নির্ভর। উন্নত প্রযুক্তির কোন ছোঁয়া ছিল না, সেচ ব্যবস্থা ছিল না, ছিল না কোন উন্নত বীজের ধারণা। দেশে যতটুকু শিল্প ছিল, সেটি আবার কুটিরশিল্প । কার্যত যন্ত্রশিল্প ছিল অনুপস্থিত। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের যাঁতাকলে পড়ে আমাদের কৃষিব্যবস্থায় এক চরম স্থবিরতা নেমে আসে, শিল্পের বিকাশ-সম্ভাবনা হয় তিরোহিত। এমন প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের ব্যবহার ও চাহিদা ছিল মূলত শহরের মানুষের বাতি জ্বালানো ও পাখা চালানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার- স্বাধীনতা-উত্তর পরিপ্রেক্ষিত : পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল খুবই অপর্যাপ্ত। তাই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ব্যাপক ঘাটতির সমস্যায় পড়ে। চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহে অপারগতার কারণে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ব্যাহত হয়, স্বাধীনতার সুফল হতে জনগণ বঞ্চিত হয়। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পরবর্তী গণবিমুখ সরকারসমূহ উন্নয়নের প্রাণশক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতি উদাসীন থাকায় সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়। এছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের স্বল্পমূল্য ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যুৎ সমস্যা তীব্রতর হয়।
যে বিপুল স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে সংগ্রামী মানুষেরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা করেছিল, তা ব্যর্থ হতে পারে না। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এদেশের মানুষ নিজেদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ রচনায় আত্মনিয়োগ করে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার পর জনগণের জীবনমান উন্নত আর সমৃদ্ধ দেশ গঠনের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে । বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি উন্নত কৃষিব্যবস্থা ও ভারি যন্ত্রশিল্পের বিকাশের প্রতি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে। কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার ও চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে গত দুই দশকে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধিষ্ণু জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং নিকট ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরো তীব্রতর হবে। দ্রুত বিকশিত অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এক বিশেষ চমক। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই গতিকে ধরে রাখতে জ্বালানি সরবরাহ দ্রুত বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই । বাংলাদেশে জ্বালানি হিসেবে মুখ্যত বিদ্যুৎ শক্তিই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই সরকার বিদ্যুৎকে অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে এর ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের প্রয়োজনে 'পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১০' প্রণয়ন করে। ২০০৯ সালে যখন এ মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ চলছিল তখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত অনির্ভরযোগ্য ও ভঙ্গুর পর্যায়ে ছিল। এই অবস্থার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ, যথাযথ ব্যবহার ও অপচয় রোধের কার্যক্রমসহ এক ব্যাপকভিত্তিক জ্বালানি উন্নয়ন কৌশলপত্র গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য সহজলভ্য ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে । বর্তমানে বাংলাদেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আছে, যা ২০০০ সালে ছিল ৩২ শতাংশ ।
পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১০-এ গৃহীত পদক্ষেপ : বিদ্যুৎব্যবস্থার বিপর্যয়কর অবস্থায় সরকার ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১০' প্রণয়ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার একটি সমীক্ষা করে পি.এস.এম.পি। সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০০৬-০৭ সালে যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩,৯৭০ মেগাওয়াট, ২০১১ সালে চাহিদা দাঁড়ায় ৪,৮৩৩ মেগাওয়াট। সমীক্ষায় ২০১৫, ২০২০ ও ২০৩০ সালে বিদ্যুতের চাহিদা নিরূপিত হয় যথাক্রমে ১০,২৮৩ মে.ও, ১৭,৩০৪ মে.ও. এবং ৩৩,৭০৮ মে.ওয়াটে। বিদ্যমান সংকট ও ভবিষ্যতের বিপুল চাহিদা পূরণের জন্য সরকার চার স্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ করে :
১ম ধাপ : তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ( ৬-১২ মাস )তরল জ্বালানিভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পিকিং প্ল্যান্ট নির্মাণ |
২য় ধাপ : স্বল্প মেয়াদী ব্যবস্থা ( ১৮-২৪ মাস )
তরল জ্বালানিভিত্তিক পিকিং প্ল্যান্ট নির্মাণ
৩য় ধাপ : মধ্য মেয়াদী ব্যবস্থা ( ৩-৫ বছর )
ক) গ্যাস ও জ্বালানিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট নির্মাণ ।
খ) গ্যাস ও জ্বালানিভিত্তিক পিকিং প্ল্যান্ট নির্মাণ
গ) কয়লাভিত্তিক স্টেম প্ল্যান্ট নির্মাণ
৪র্থ ধাপ : দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা (৫ বছরোর্ধ্ব )
ক) এল.এন.জিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট নির্মাণ ।
খ) দেশিয়/ আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ।
গ) গ্যাস/ তেলভিত্তিক পিকিং প্ল্যান্ট নির্মাণ ।
ঘ) নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ।
ঙ) নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ।
চ) আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় বিদ্যুৎ আমদানি ।
এ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সফল করার জন্য সরকার নিজস্ব বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করেছে।
বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি : সরকারের তাৎক্ষণিক ও স্বল্প মেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানত তেলভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ইতোমধ্যে স্থাপিত উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। তবে ৯০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা যাচ্ছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে উৎপাদনক্ষমতার সঙ্গে প্রকৃত উৎপাদনের বিরাট ব্যবধান থেকে যাচ্ছে। নাজুক বিতরণ ব্যবস্থার কারণে গ্রাহকের জন্য কার্যত ৬ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরবরাহকৃত বিদ্যুতের সঙ্গে আরো ২ হাজার মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ সংযুক্ত করা সম্ভব হলে আপাতত সন্তোষজনক একটা বিদ্যুৎব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
সরকারের রূপকল্প অনুসারে ২০২১ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর মহৎ উদ্যোগের জন্য দেশবাসী চেয়ে আছে। এর জন্য ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে উৎপাদনক্ষম করার পাশাপাশি আরও ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অবকাঠামো নির্মাণ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য ও করণীয় নির্ধারণে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১৬ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ মাস্টারপ্ল্যানে অনুমান করা হয়েছে ২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৫২ হাজার মেগাওয়াট; এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতাসমূহ : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে ২৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বয়স ২০ বছরের বেশি। এ সব উৎপাদন কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায়শই ব্যাহত হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জ্বালানি সংকট। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন অতিমাত্রায় প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও মজুদ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। দেশীয় গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়া ছাড়া বাড়ানোর কোন তথ্য দিচ্ছে না; বরং বিদ্যমান গ্যাস দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার সংকেত দিচ্ছে। এছাড়া অনুন্নত বিতরণ ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় রয়েছে অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও সীমাহীন দুর্নীতি । সিস্টেম লসের নামে ১৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়নে সরকারের চলমান পদক্ষেপসমূহ : বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য সহজলভ্য ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণের যে প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চালক হিসেবে বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে যে দশটি প্রকল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার তিনটিই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং একটি এল.এন.জি টার্মিনাল যা প্রতিষ্ঠিত হবে বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য। বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনটি হল মৈত্রী সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্ৰ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি, মজুদ ও সরবরাহের জন্য গভীর সমুদ্রে এল.এন.জি টার্মিনাল নির্মাণের এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাতারবাড়ি-মহেশখালীতে ‘এনার্জি হাব' করার কাজ শুরু হয়েছে যেখানে ১০,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কয়লাবন্দর গড়ে উঠবে ।
এছাড়া সরকার ২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে ৩হাজার ১৭৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে সরকারের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ' (স্রেডা)। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সৌরবিদ্যুৎই হবে প্রধান। সরকার দুই প্রক্রিয়ায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছে—এক. বাড়িভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, দুই. মিনি গ্রিড প্রকল্প। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ১১টি মিনি গ্রিড প্রকল্প স্থাপিত হয়েছে যাদের সর্বমোট উৎপাদন প্রায় দেড় মেগাওয়াট। সৌরবিদ্যুতের মেগা গ্রিড প্রকল্প চালুও প্রক্রিয়াধীন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু তুষ জ্বালিয়ে ১ হাজার ১৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এছাড়া গৃহস্থালি বর্জ্য, হাঁস,মুরগি,গবাদি পশুর মল, মানুষের পয়োবর্জ্য প্রভৃতিও বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে পারে । সরকার সকল সম্ভাব্যতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতোমধ্যে সরকার ৬টি উপজেলায় সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছে এবং অচিরেই বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।