ভাব-সম্প্রসারণ : পুণ্যে-পাপে, দুঃখে-সুখে, পতনে-উত্থানে, মানুষ হতে দাও তোমার সন্তানে

পুণ্যে-পাপে, দুঃখে-সুখে, পতনে-উত্থানে, মানুষ হতে দাও তোমার সন্তানে

পুণ্যে-পাপে, দুঃখে-সুখে, পতনে-উত্থানে, মানুষ হতে দাও তোমার সন্তানে।

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ তার আচরণ দ্বারা নিজেকে পৃথক রেখেছে অপরাপর প্রাণী থেকে। মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অন্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা। এই জীবনযাপন প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে হাসি-কান্না, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিরহ বেদনা। উত্থান পতন আছে আর সবকিছুই। সকল বাধা অতিক্রম করেই মানুষকে তার মঞ্জিলে পৌঁছতে হয়। মানবজীবন বৈচিত্র্যময়। এই বৈচিত্যময় জীবনে নানা প্রকার প্রতিকূল পরিবেশের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে মানুষকে তার অবস্থানে পৌঁছতে হয়। বাধা-বিঘ্নতা মনের চলার পথে বিকাশের উপকরণ। বাধাহীন জীবন কোন জীবন নয়, মনের বিকাশের এই অন্তহীন পর্যায়ে হাসি-কান্না, বিরহ-বেদনা, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই প্রকৃত মানুষের উম্মেষ ঘটে। তাই এই বিপদ-সংকুল পথ মাড়িয়েই মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছে যেতে হয়, পৌঁছতে হয় সেই অসীম সময় আর আদিপত্ত বিস্তৃত জীবনের পর্যায়ে যা পরম্পরায় একজন হতে আর একজনে সঞ্চারিত হয়ে মহাযুগ তৈরি করে। হতাশাকে পিছনে ফেলে ভীতি – বাধা বিঘ্নতাকে জীবন চলার পথের একটি অধ্যায় মনে করে এগিয়ে যেতে হয় সেই অগ্রগামী মানব উন্মেষের দিকে। সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রকৃতির সাথে। প্রকৃতিজাত এই সকল বাধা অতিক্রম করেই মানুষকে সভ্য হতে হয়েছে। সভ্য হতে হয়েছে ইতর প্রাণিকুল ও মানব সম্প্রদায়ের মধ্যকার নিজস্ব দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে। তাই মানব সভ্যতার এ যাবৎকালের ইতিহাস হচ্ছে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ইতিহাসের কালানুক্রমে মানুষকে অতিক্রম করতে হয়েছে বাধা-বিঘ্নতা, দুঃখ –বেদনা, হাসি-কান্নার ভিতর দিয়ে। তারি মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আজকের এই সাফল্য। তাই মানব জাতির এই দীর্ঘ মাত্রায় ধৈর্য ধারণ করে সব কিছুর মুখোমুখী দাঁড়াতে হয়।

বস্তুতপক্ষে সহজ প্রত্যাশা মানব বিকাশের অন্তরায়। প্রাণিকুলের সহজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষুধা, লোভ-লালসা, কাম প্ৰভৃতি বোধ, কেবল মানব সম্প্রদায়ই স্বার্থকভাবে পেয়েছে তাদের এই বোধগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাই প্রকৃতির পাশাপাশি নিজের সাথেও সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়েছে তাকে। মানবজীবনের এই সংগ্রামময় অধ্যায়ে দুঃখ – দারিদ্র্যতাকে সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হয়। এখানে ভীরুতা ও কাপুরুষতার স্থান নেই। এই জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে হলে পাপ, দুঃখ, আনন্দ, বিরহ, পতনের ভিতর দিয়েই নিজের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এজন্য চাই সমস্ত বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে চলবার মানসিকতা। তবেই সম্ভব হবে জীবনের চলমানতায় প্রকৃতপক্ষে মানবসত্ত্বা। প্রকৃত মানুষ হতে হলে অতি সহজে আশা করা অসম্ভব। কোন কিছুর মঞ্জিলে পৌঁছাতে হলে সঙ্গত কারণে কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। এটিই হলো প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম যা সহজে সকলকে মেনে নিতে হয়। কষ্ট বা যে কোন ধরনের বাধা জীবনে সফলতার সহায়ক। পূণ্য-পাপ, সুখ-দুঃখ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে অর্জিত জীবনই পরিপূর্ণ জীবন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url