শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও তার প্রতিকার বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর

শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও তার প্রতিকার বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর

'শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও তার প্রতিকার' শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপন করার জন্য একটি ভাষণ তৈরি কর ।

বিদ্যালয় আমাদের বিদ্যালয়
এখানে সভ্যতারি ফুল ফোটানো হয় ।

'শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও তার প্রতিকার'- শীর্ষক সেমিনারের মাননীয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ- সবার প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

সুধী
আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি । শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র স্থান। ছাত্র-ছাত্রীরা জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষাঙ্গনে পদার্পণ করে। কিন্তু সন্ত্রাস তাদের সে মহৎ ইচ্ছাকে ধূলিসাৎ করে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। তাই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নির্মূল করা অত্যন্ত জরুরি ।

সম্মানিত সুধীসমাজ
শিক্ষাঙ্গনে কেন সন্ত্রাস সৃষ্টি হচ্ছে তার কারণগুলো আমাদের প্রথম খতিয়ে দেখা দরকার । যদিও একথা আমরা সবাই জানি যে, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের মূল কারণ হলো সন্ত্রাস নির্ভর রাজনীতি । মূলত রাজনীতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই সারাদেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে । রাজনীতিক দলগুলোর লেজুড় হিসেবে প্রত্যেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে ছাত্র সংগঠন রয়েছে । তরুণ ছাত্ররা নিজেদের ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে রাজনীতিক দলগুলোর ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে। ফলে শিক্ষার্থীরা রাজনীতিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে এক সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। একদিকে বেকারত্ব অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা তাদেরকে একদিন ভয়ংকর সন্ত্রাসীতে পরিণত করে । তাছাড়া ছাত্রদের নৈতিক অবক্ষয় ও উগ্র চেতনা শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস সৃষ্টিতে অনেকটা প্রভাব ফেলে ।

সুধীবৃন্দ
এ কথা বলাই বাহুল্য যে, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস সৃষ্টি হওয়াতে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে । প্রায়ই দেখা যায়, ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দাঙ্গা, ভাংচুর ও পেশীশক্তির প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে । যার কুপ্রভাবে মাসের পর মাস শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকে। ফলে নির্ধারিত সময় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। গুটি কয়েক সন্ত্রাসীর জন্য অসংখ্য শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীর জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। শুধু কি তাই— এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যেমন চাপ বাড়ছে, তেমনি জাতিও হয়ে পড়ছে মেধাশূন্য ।

সচেতন সুধীবৃন্দ
বিপথগামী এসব শিক্ষার্থীদের অবিমৃষ্য আচরণে জাতি ক্রমেই অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে । তাই আর চুপ করে বসে থাকার অবকাশ নেই । যেকোনো ভাবেই হোক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অসুস্থ পরিবেশ বিরাজ করছে তার অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই হবে । এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে । শিক্ষা বিতরণ ও অর্জনের পবিত্র স্থান যেমন মাদকমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়, তেমনি রাজনীতিক প্রভাবমুক্ত হওয়াও জরুরি— এই আদর্শ সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসনের মননে ধারণ করতে হবে । সর্বোপরি সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং জনগণ তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করা সম্ভব। শিক্ষাঙ্গনের সন্ত্রাস সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হোক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সুস্থ, সুন্দর ও আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হোক এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি । এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url