শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর

শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর

'শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা' বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি কর ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেনー
যে সমাজে শৃঙ্খলা আছে, ঐক্যের বিধান আছে, সকলের স্বতন্ত্র স্থান ও অধিকার আছে, সেই সমাজেই পরকে আপন করিয়া লওয়া সহজ ।

শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, উপস্থিত সুধীমণ্ডলী সবাইকে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা ও সাদর সম্ভাষণ ।

সুধীমণ্ডলী
জগৎ শৃঙ্খলার জালে বাঁধা, নিয়মের জালে আটকানো । অণু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, এই মহাবিশ্বে যা কিছু দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সবকিছুই একটি বিশেষ সজ্জায় সাজানো, একটি বিশেষ শৃঙ্খলে বাঁধা । তাই বলা হয়, বিশ্বজগৎ নিয়মের অধীন । এই নিয়ম বা শৃঙ্খলার ব্যত্যয় হলেই মহাবিপর্যয় ঘটে । আজ এমনি শৃঙ্খলা বিষয়ক একটি সময়োপযোগী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি । আর তা হলো শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা । বস্তুত ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই । ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলার পূর্বশর্ত হলো শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা । দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইদানীং প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কম-বেশি বিচ্ছৃঙ্খলা লক্ষ করা যায় । কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্ছৃঙ্খলতা চরম সীমায় পৌঁছে এখন তা সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ।

প্রিয় সুধীবৃন্দ
শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র স্থান । বিবেকবান, নীতিবান আলোকিত মানুষ গড়ার আদর্শ স্থান হলো বিদ্যাপীঠ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে এবং নিজেদের সুপ্ত চেতনা ও প্রতিভা জাগ্রত করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার জন্য ছাত্র- ছাত্রীরা শিক্ষাঙ্গনে পদার্পণ করে । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, বর্তমান রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে বিরাজ করছে উচ্ছৃঙ্খলতা ও সন্ত্রাস । ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতিক সংঘর্ষে শিক্ষাঙ্গন মাসের পর মাস বন্ধ থাকে । ফলে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। যার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ শান্তিপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী সেশন জটের জাঁতাকলে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয় । এভাবে চলতে থাকলে জাতি মেধাশূন্য হয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই । তাই এখন সবাইকে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। এর জন্য ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন এবং সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে । প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি বিধানে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সেই আইন যথাযথভাবে প্রয়োগে প্রশাসনকে সচেষ্ট হতে হবে ।

সম্মানিত সুধী
অবশ্যই বিষয়টি সম্পর্কে আপনারা অবগত যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অন্যতম কারণ হলো আমাদের দেশের অসুস্থ ও বিবেকবর্জিত রাজনীতি । রাজনীতিকরা তাদের হীন স্বার্থ কায়েম করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করে । তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চর্চা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে এবং বিবেকহীন রাজনীতিক দলগুলো যাতে হীন উদ্দেশ্যে ছাত্রদের ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে । সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে রাজনীতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। তাই বন্ধুগণ আসুন, প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর হই । আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগে শিক্ষাঙ্গনগুলো থেকে উচ্ছৃঙ্খলতার অভিশাপ চিরতরে দূর হবে— এই প্রত্যাশা রেখে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি । সবাইকে ধন্যবাদ ।
Next Post Previous Post