অনুচ্ছেদ রচনা : বাংলাদেশের জাতীয় কবি

বাংলাদেশের জাতীয় কবি

বাংলাদেশের জাতীয় কবি

আমাদের দেশ সবুজের দেশ, নদীর দেশ, ফসলের দেশ ও প্রকৃতির দেশ বলেই কবির দেশ। বাংলায় অনেক কবি রয়েছে তবে আমার প্রিয় কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 

১৮৯৯ সালে ২৫ মে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কবি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফকির আহমদ ও মা জাহেদা খাতুনের ঘরে দুখুমিয়ার জন্ম। ৮ বছর বয়সে কবির বাবা মারা গেলে চাচার কাছে থাকেন। গ্রাম্য মক্তবে তার শিক্ষাজীবন শুরু। তাঁর চাচাই তাঁকে আরবি ও ফারসি শেখান। ৮ বছর বয়সেই তিনি লেটো গানের দলে যােগ দেন। তারপর আসানসােলের এক রুটির দোকানে পাঁচটাকা বেতনে কাজ নেন। তাঁর প্রতিভার পরিচয় পেয়ে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের এক দারােগা তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। ১৯১৬ সালে কবি যখন আসানসােল হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তখন ইউরােপে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হয়। কাউকে কিছু না বলে তিনি সৈন্য দলে যােগ দিয়ে সিন্ধু প্রদেশে চলে যান। কর্ম দক্ষতার গুণে অল্পদিনে তিনি হাবিলদার হন। 

শুধু ভারত না বাংলাদেশকেও স্বাধীন করার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছে কবির গান ও কবিতা। তাঁর গান কবিতায় মানুষের কথা আছে, সাম্যের কথা আছে, ইসলামের কথা আছে। তিনি তাঁর কবিতা ও গানে জাতির মনের কথা ব্যক্ত করেছেন। অসহায় মানুষের মনে চেতনাবােধ জাগিয়ে তােলার জন্য তিনি বিদ্রোহী হয়েছিলেন। তিনি অনাচার, অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছিলেন। জাতিকে দিয়েছেন বিদ্রোহী কবিতা, সাম্যের কবিতা। তাই তিনি জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি। 

আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছােটদের জন্য যেমন লিখেছেন-প্রভাতী, ঝিঙেফুল, মা, আমি হব, সংকল্প, খুকি ও কাঠবেড়ালি, লিচুচোর, ঈদের চাঁদ, চল চল চল, শিশু সওগাত ইত্যাদি আবার বড়দের জন্যও লিখেছেন-বিদ্রোহী, কামাল পাশা, খেয়াপারের তরণী, মােহররম, আজ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, সাম্যবাদী, জীবন বন্দনা, যৌবনের গান ইত্যাদি। তার অসাধারণ প্রতিভা, সংগ্রামী চেতনা, দুর্জয় সাহস ও কাব্য প্রতিভা আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। অগ্নিবীণা’ ও ‘ভাঙ্গার গান’ তাঁর অন্যতম কাব্যগ্রন্থ। ইসলামি কবিতা ও গান ছাড়াও তাঁর গল্প, উপন্যাস ও নাটক আজ আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে কলকাতা থেকে দেশে আনেন। পিজি হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেন। ৩৪ বছর অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৬ সালে ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি, মানবতার কবি, আমার প্রিয় কবি মৃত্যুবরণ করেন। এখনও তিনি অসহায় মানুষের সংগ্রামী চেতনার প্রেরণা হয়ে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন চিরকাল।

Next Post Previous Post