অভিজ্ঞতা বর্ণনা : ভারত ভ্রমণ

অভিজ্ঞতা বর্ণনা : ভারত ভ্রমণ
অভিজ্ঞতা বর্ণনা : ভারত ভ্রমণ 

ভারত ভ্রমণ 

অনেক দিন ধরেই ভারতে যাব বলে মনের মধ্যে একটা প্রস্তুতি কাজ করছিল। অবশেষে গ্রীষ্মের ছুটি এলাে। বাবা অবশ্য আগে। থেকেই আমাদের পাসপাের্টসহ আনুষঙ্গিক কাগজ-পত্রাদি তৈরি করে রেখেছিলেন। এখন শুধু ভিসা পাওয়ার অপেক্ষামাত্র। আর বড়াে ভাইয়ের কাছ থেকে আমি প্রায় সবকিছুই জেনে নিয়েছিলাম। যেমন- কোথায় ভিসার জন্য যেতে হবে, কোথায় ট্রাভেলিং চার্জ দিতে হবে, কীভাবে ভারতে প্রবেশ করতে হবে ইত্যাদি। কী জানি একটা কারণে তখন ইন্ডিয়ান সরকার ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি করছিল। তারপরেও আমাদের ভাগ্য ভালাে যে, বাবা অতি দ্রুত আমাদের সবার ভিসা নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। অবশেষে এলাে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, মনে আছে আমরা খুব ভােরে লালমনিরহাট থেকে বাসযােগে স্থলবন্দর বুড়িমারিতে পৌছলাম । বাংলাদেশের কাটম অফিসে আমাদের পাসপাের্ট ও ভিসা চেকের পর আমরা যখন ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করলাম তখন আমাদের ব্যাগগুলাে চেক করা হলো; পাশে চেয়ে দেখি বড়াে ভাই এসে হাজির। আহ! কী যে ভালাে লাগল । ভারত এক অবাক করা দেশ। আমরা একটি বাসে উঠে শিলিগুড়ি শহরের দিকে রওনা দিলাম। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে পৌছলাম। এরপর আমরা শহরের স্কাই ভিউ' নামক একটি হােটেলে উঠলাম । খুবই নিরিবিলি, সাজানাে-গােছানাে এখানকার পরিবেশ। আমরা বিশ্রাম নিয়ে পাশের একটি খাবার হােটেলে। গেলাম। দেখলাম এখানকার পরিবেশও বেশ ভালাে। আমাদের প্রায় মিনিট দশেক গরম ভাতের জন্য অপেক্ষা করতে হলাে। এরপর হােটেলে ফিরে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারি না; হঠাৎ আজানের সুমধুর ধ্বনি কানে এসে পৌছল। অনেকে বলে এখানে নাকি আজান দিতে দেয় না; কথাটা আদৌও সত্য নয়। সে যাহােক, জানালার পর্দাটি সরিয়ে দেখি আলােকিত শিলিগুড়ি শহর ।তারকাখচিত সেই আলােয় যেন মনটা অন্যরকম এক অনুভূতিতে নেচে উঠল । আরও দূরে চেয়ে দেখি উঁচুতে আরও অনেক আলাে । ভাই বললেন— ঐ হচ্ছে দার্জিলিং আর পাশেই মিরিক । আমরা অবশ্যই দার্জিলিং এবং মিরিকে যাব, কিন্তু তার আগে ভাই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে সেখানে যাব। পরের দিন সকালে ‘বিক্রম’ নামে একটি অটোরিকশায় আমরা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দিলাম। প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা এর প্রথম গেটে পৌছলাম। এর প্রাশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য একাডেমিক ভবনগুলােও দেখতে বেশ সুন্দর; ভবনগুলাের পাশে যেন ছােটো ছােটো বন। ও গাছপালা সমৃদ্ধ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর। এর মাঝ দিয়ে চমৎকার পাথরে বাঁধানাে 
রাস্তা । ছাত্রদের জন্য যে হােস্টেল তাও আবার চা বাগানের মধ্যে। সত্যি এক অন্যরকম দেশ ভারত । বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঘুরতে ভাইয়ের নানা বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়, চা-নাশতাতে বেলা অনেকটা গড়িয়েছে। অতএব আবার সেই শিলিগুড়ি শহরে ফেরার পালা। পরের দিন খুব ভােরেই আমরা দার্জিলিং যাব, কিন্তু ভাই প্রস্তাব করলাে আগে ‘মিরিক’ দেখব । আমরা সেই পাহাড়ে ওঠার জন্য কমান্ডাে গাড়ি’তে রওনা দিলাম। সেই প্রথম আমার পাহাড় দেখা- যত কাছে যাচ্ছি তত সবুজ আর সবুজের উঁচু পাহাড়; মনে হলাে এ আরেক দুনিয়া । শুধু শুনেছি মেঘ আর পাহাড় একাকার হয়ে যায়; সত্যি তাই । এই সেই বিখ্যাত হিমালয় । মনে পড়ল কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গান, ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ... । প্রায় সাত দিনের এ ভ্রমণের যে সুখকর স্মৃতি তা কোনােদিন ভুলব না।
Next Post Previous Post