অভিজ্ঞতা বর্ণনা : পরীক্ষার পূর্ব রাত্রির কথা

অভিজ্ঞতা বর্ণনা : পরীক্ষার পূর্ব রাত্রির কথা

অভিজ্ঞতা বর্ণনা : পরীক্ষার পূর্ব রাত্রির কথা 

পরীক্ষার পূর্ব রাত্রির কথা 

কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন—

ছাত্রজীবন সুখের হইত
যদি পরীক্ষা না থাকিত। 

ছাত্রছাত্রী মাত্রই পরীক্ষাকে কম-বেশি ভয় পেয়ে থাকে। বস্তুত ছাত্রজীবনের যত যন্ত্রণা তা এই পরীক্ষার কারণেই। যদি পরীক্ষা দিতে না হতাে তাহলে ছাত্রজীবন না জানি কতই আনন্দের হতাে। পরীক্ষার সময় স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রছাত্রীরা একটু উদ্বিগ্ন থাকে এবং নানা চিন্তা তাদের মনকে দুর্বল করে ফেলে। বিশেষ করে পাঠে অমনােযােগী, ফাকিবাজ দুর্বল ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারব কি পারব না— এই দুশ্চিন্তায় অসুস্থ পর্যন্ত হয়ে যায়। পরীক্ষাকালীন সহজাত অস্থিরতা থেকে কোনাে ছাত্রছাত্রীই মুক্ত হতে পারে না। সত্যি বলতে এ এক স্নায়বিক চাপ। পরীক্ষার পূর্বরাত্রিতে সেই চাপ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। আমার মনে পড়ছে এসএসসি পরীক্ষা আরম্ভের পূর্বরাত্রির তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। আমাদের প্রথম পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ইংরেজি বিষয় দিয়ে । যথারীতি সন্ধ্যায় বই পড়তে বসেছি। কিন্তু অস্থিরতায় পড়া কি আর হয় শুধু পাতার পর পাতা উলটানাে সার! ইংরেজি পড়তে শুরু করেছি এমনি অন্যান্য বিষয়ের অপঠিত অধ্যায়গুলাে আমার মনে এসে ভিড়তে লাগল । এভাবে ক্রমান্বয়ে রাত যত গভীর হতে থাকল আমার মনের অস্থিরতা ততই বাড়তে শুরু করল । সময়মতাে খাবার টেবিলে যেতেও ভুলে গেলাম। কী জানি এক অজানা আশঙ্কায় বুকের ভেতর দুরু দুরু শুরু হলাে। মা এসে কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা মেপে জিজ্ঞেস করলেন, “শরীর কেমন লাগছে খােকা? কিছু বলার ইচ্ছাশক্তি না থাকা সত্ত্বেও বললাম, এই তাে ভালাে। তবু মা প্রশ্নবােধক চোখে চেয়ে আমার পাশে এসে বসলেন। আমার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন । আসলে মায়ের মন তাে সন্তানের উদ্বিগ্ন ভাব দেখে তিনিও উৎকণ্ঠিত। মা আমার মনােবল বাড়াতে অনেক সান্ত্বনার কথা বললেন। মা ঘর থেকে চলে গেলে পুনরায় পড়ায় মনােযােগী হলাম। কিন্তু মনের দুশ্চিন্তা দূর হলাে না। শেষ বারের মতাে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরগুলাে দেখে নিতে শুরু করলাম। কিন্তু ক্রমশই আমার দুই চোখে ঘুম জড়িয়ে আসতে থাকল। কিন্তু ঘুমকে পাত্তা না দিয়ে পরীক্ষার পড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকি। এভাবে সময় কোন দিক দিয়ে চলে গেল টের পাওয়া গেল না। একসময় ভাের হয়ে এলাে। অতঃপর অসহায় অবস্থার মধ্যে নিজেকে রেখেই মনে সীমাহীন উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠা নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে উপস্থিত হই। যদিও সেই উদ্বিগ্নের ফল ছিল মধুর । কেননা আমি জিপিএ-৫ পেয়ে উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম । তথাপি পরীক্ষার পূর্বরাত্রির সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কখনাে ভুলবার নয়।
Next Post Previous Post