অনুচ্ছেদ রচনা : বুদ্ধিজীবী দিবস

অনুচ্ছেদ রচনা : বুদ্ধিজীবী দিবস
বুদ্ধিজীবী দিবস 

বুদ্ধিজীবী দিবস 

১৯৭১ সাল বাঙালির জীবনের স্মরণীয় বছর। বছরটি পাওয়ার আনন্দে ও হারানাের বেদনায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ বছরে আমরা যেমন চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা পেয়েছি তেমনি হারিয়েছি অসংখ্য দেশপ্রেমিক বাঙালি নর-নারীকে । ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। তারা নির্বিচারে হত্যা করে এদেশের সর্বস্তরের লাখাে মানুষকে। এর ফলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ । দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযােদ্ধাদের উপর্যুপরি আঘাতে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে । ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে তারা বুঝতে পারে তাদের চরম পরাজয় আসন্ন। মুক্তিযােদ্ধাদের প্রবল প্রত্যাঘাতে তাদের মনােবল ভেঙে পড়ে। এ সময়ে তারা তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সহায়তায় বাংলার সূর্যসন্তানদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করার নীল নকশা প্রণয়ন করে। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। কারণ তারা জানত, বুদ্ধিজীবীরা হলাে একটি দেশের প্রাণসম্পদ। তাদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের প্রাণে আঘাত করার প্রয়াস চালায়। তাই পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর বাহিনীর সহায়তায় ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ বাঙালি বুদ্ধিজীবীগণকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্বিচারে হত্যা করে। সেই দিন তারা হত্যা করে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনােয়ার পাশা, রাশীদুল হাসান, সন্তোষ ভট্টাচার্য, লেখক শহীদুল্লা কায়সার, নিজাম উদ্দীন আহমদ, আ.ন.ম. গােলাম মােস্তফাসহ প্রখ্যাত চিকিৎসক ফজলে রাব্বী ও আবদুল আলীমকে। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে তারা এ বর্বরােচিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জাতির প্রাণে যন্ত্রণার ক্ষত সৃষ্টি করে। স্বাধীনতা লাভের অর্থাৎ ষােলই ডিসেম্বরের পর মিরপুর ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে এসব মনস্বী বুদ্ধিজীবীর ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। তবে অনেকের লাশের সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। আমরা প্রতি বছর ১৪ই ডিসেম্বর এই জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পালন করি বুদ্ধিজীবী দিবস'।
Next Post Previous Post