ভাব-সম্প্রসারণ,ভাব-সম্প্রসারণের প্রয়ােজনীয়তা, ভাব-সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম

ভাব-সম্প্রসারণ,ভাব-সম্প্রসারণের প্রয়ােজনীয়তা, ভাব-সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
ভাব-সম্প্রসারণ,ভাব-সম্প্রসারণের প্রয়ােজনীয়তা, ভাব-সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম

ভাব-সম্প্রসারণ 

ভাবের শিল্পসম্মত প্রসারণই ভাব-সম্প্রসারণ । নানা তথ্যে, ভাব তাৎপর্যে ও ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে লুক্কায়িত কোনাে বিষয় বিস্তৃতভাবে সহজবােধ্য করে প্রকাশ করাই ভাব-সম্প্রসারণের প্রধান উদ্দেশ্য। 

সাধারণত কবিতার পঙক্তি, স্তবক কিংবা গদ্যের অংশবিশেষ, কোনাে মনীষীর উদ্ধতি কিংবা প্রবাদ-প্রবচন ভাব-সম্প্রসারণের জন্য। দেওয়া হয়। আর এ ক্ষুদ্র অংশের আড়ালে থাকতে পারে মানবজীবনের গভীর অভিব্যক্তি, মানবতার কথা, নৃশংসতার কথা, সামাজিক বৈষম্যের কথা, ব্যক্তির স্বার্থপরতার কথা, সংসার জীবনের নানা অসংগতির কথা, নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, সমাজ-রাষ্ট্র অথবা বিশ্বশান্তির কোনাে বার্তা। ভাব-সম্প্রসারণের বক্তব্যকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তি-তর্ক, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, দৃষ্টান্তসহ বস্তুনিষ্ঠ এবং প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করাই মূল কাজ। কবি বা লেখক তাঁর সৃষ্টির প্রয়ােজনে সামান্য অংশে নানা উপমা, অলংকার ব্যবহার করতে পারেন; আকর্ষণীয় করার প্রয়ােজনে বক্তব্যকে নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, সংলাপ থাকতে পারে, এমনকি প্রশ্নেরও অবতারণা হতে পারে, থাকতে পারে শব্দ ও বাক্য ব্যবহারে যথেষ্ট মুনশিয়ানা; এর ফলে সহজেই সেই বক্তব্যকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই মূল বিষয়টিকে আবিষ্কার করে প্রয়ােজনীয় যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা, বিচার-বিশ্লেষণ, উদাহরণ কিংবা দৃষ্টান্তসহ নিজস্ব অভিমত সহজ-সরল ভাষায় উপস্থাপন করতে হয়। এ প্রসঙ্গে নিচের উদাহরণ থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে

প্রাচীরের ছিদ্রে এক নাম গোত্রহীন 
ফুটিয়াছে ছােটো ফুল অতিশয় দীন । 
ধিক্‌-ধিক্ করে তারে কাননে সবাই,
সূর্য উঠি বলে তারে, ভালাে আছ ভাই? 


এখানে ‘ছােটো ফুল', 'কানন’ ও ‘সূর্য'- তিনটিই রূপক। কবি রূপকের আড়ালে অন্য কোনাে ভাবের কথা ব্যক্ত করেছেন। কাননে অর্থাৎ ফুলের বাগানে সমস্ত ফুল কোনােক্রমেই ছােটো ফুলটিকে তাদের সমগােত্রীয় বলে মেনে নেয় না; পক্ষান্তরে, সূর্য' নির্দ্বিধায় ভাই বলে ছােটো ফুলটিকে সম্ভাষণ জানায় । সূর্যের মধ্যে কবির মূল বক্তব্যটি লুক্কায়িত । আসলে কবি সূর্যের রূপকের অন্তরালে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, উদার, মহৎ ও আলােকিত মানুষের কথাই বলেছেন। আর এ অংশের ভাব-সম্প্রসারণে এ ধরনের মানুষকে নিয়ে বিস্তৃত আলােচনা করতে হয় । অন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে- ‘অসি অপেক্ষা মসি অধিকতর শক্তিমান'। 

বাক্যটির ছােটো পরিসরের মধ্যে বিরাট ভাব রয়েছে। তবে অবশ্যই ব্যবহৃত শব্দগুলাের আভিধানিক অর্থ জানতে হবে। যেমন- অসি অর্থ তরবারি, অন্যদিকে মসি অর্থ লেখার জন্য কালি; অর্থাৎ তরবারির চেয়ে লেখনী অধিক শক্তিমান। এখানে লেখনী অস্ত্রকে সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই দিক বিস্তারিত আলােচনা করতে হবে।

ভাব-সম্প্রসারণের প্রয়ােজনীয়তা 

১. যে কোনাে সংক্ষিপ্ত, যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার যােগ্যতা অর্জিত হয় । 

২. ভাব-প্রকাশে ভাষা চর্চার আবশ্যকতা রয়েছে তা অনুধাবন করা যায়। 

৩. সংক্ষিপ্ত বিষয় থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। 

৪. কোনাে বিশেষ বক্তব্য থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল রপ্ত করা যায় । 

৫. অপেক্ষাকৃত কঠিন কথাকে সহজ করে বলার যােগ্যতা অর্জিত হয় ।

ভাব-সম্প্রসারণ লেখার নিয়ম 

১. উদ্ধত অংশ বা তাৎপর্যপূর্ণ বাক্যটি গভীর মনােযােগে বারবার পড়তে হয় এবং মূল ভাবটুকুতে যা গােপন রয়েছে তা বুঝে নিতে হয় । বিষয় বুঝতে পারলে সহজেই ভাব-সম্প্রসারণ করা যায় ।

২. কোনাে উপমা, রূপক, প্রতীক কিংবা সংকেতের আড়ালে মূল ভাবটি ঢেকে আছে কি না; তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে ।

৩. ভাব-সম্প্রসারণের বক্তব্যকে প্রাঞ্জল করার প্রয়ােজনে উপমা, দৃষ্টান্ত, যুক্তি এবং প্রাসঙ্গিক যেকোনাে ঐতিহাসিক, পৌরাণিক। লৌকিক অথবা বৈজ্ঞানিক তথ্য উল্লেখ করা যায় । 

৪. ভাব-সম্প্রসারণের সময় অবশ্যই অপ্রয়ােজনীয় কথা এবং একই কথার পুনরাবৃত্তি পরিহার করতে হবে । কারণ এতে পাঠকের ক্লান্তি আসে এবং বক্তব্য নীরস হয়ে ওঠে।

৫. সম্প্রসারিত-ভাবের বিষয়বস্তুকে ছােটো ছােটো অনুচ্ছেদের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করে তুলতে হবে। তবে তা তিন-চার অনুচ্ছেদের মধ্যে হওয়া ভালাে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিন অনুচ্ছেদে এটি সম্পন্ন করা হয় । 
৬. ভাব-সম্প্রসারণে প্রদত্ত কবিতা বা পদ্য অংশের লেখকের নাম উল্লেখ করার প্রয়ােজন নেই। এমনকি এক্ষেত্রে কবি বা লেখকের কোনাে অভিমত বা অভিপ্রায় বিষয়েও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে । 
৭. প্রবাদ-প্রবচন যুক্তিসংগতভাবে ব্যবহার করা যাবে । কোনাে উদ্ধৃতি ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই যেন তা প্রাসঙ্গিক হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে ।
Next Post Previous Post