ভাব-সম্প্রসারণ : নানান দেশের নানান ভাষা বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?

ভাব-সম্প্রসারণ : নানান দেশের নানান ভাষা  বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?
 ভাব-সম্প্রসারণ : নানান দেশের নানান ভাষা  বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?

নানান দেশের নানান ভাষা বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?

 ভাব-সম্প্রসারণ : পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা শ্রেষ্ঠ । মানুষমাত্রই তার মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে। সবচেয়ে অধিক তৃপ্তি লাভ করে । মাতৃভাষা যত সহজে বােধগম্য হয় অন্য ভাষা তত সহজে বােধগম্য নয়। পরিপূর্ণভাবে মনের ভাব প্রকাশের যে পরিতৃপ্তি তা স্বদেশি-ভাষা ছাড়া অন্য কোনাে ভাষায় পাওয়া যায় না । মাতৃভাষা যেকোনাে মানুষের অস্তিত্ব ও আত্মপ্রকাশের একটি বাহন। স্বদেশি ভাষা বলতে মাতৃভাষাকেই বােঝায় । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ স্বরূপ।' মাতৃদুগ্ধ শিশুর পক্ষে যেমন পুষ্টিকর, বিদ্যাশিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা। তেমন সর্বােৎকৃষ্ট মাধ্যম। মাতৃভাষা প্রাণ-মনকে দেয় তপ্তি আর চিন্তা চেতনাকে দেয় দীপ্তি । যেকোনাে ব্যক্তিই যদি তার । মাতৃভাষাকে কঠিন ও অবহেলাযােগ্য মনে করে, তাকে মূর্খ ও পাষণ্ড না বলে উপায় নেই । প্রতিদিনের ভাবের আলাপন, সুখদুঃখ, আশা-নৈরাশ্য, আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন-কল্পনার প্রকাশ হয় মাতভাষায় । তাই মাতৃভাষা মনােভাব প্রকাশে যত উপযােগী অন্য। ভাষা ততটা নয়। বিদেশি ভাষায় যতই দক্ষতা অর্জন করুক, মাতৃভাষার ন্যায় এমন সাবলীলভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা বিদেশি ভাষায় সম্ভব নয়। মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে মানুষ যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করে এবং আনন্দ পায়, অন্য । ভাষায় তা অসম্ভব। কারণ মাতৃভাষার সঙ্গে রয়েছে তার আত্মিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য । মােটকথা হলাে মাতৃভাষা সহজাত আপন ভাষা, অন্য ভাষা পরের ভাষা । মাতৃভাষা যেমন প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার অবলম্বন, তেমনি চিন্তা-চেতনা, জ্ঞানবিজ্ঞান সাধনার মাধ্যম হিসেবেও এর কোনাে বিকল্প নেই। তাই দেখা যায়, মাতভাষায় জ্ঞানানুশীলন ব্যতীত বিশ্বে কোনাে। জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারেনি। ইংরেজরা যেদিন ফরাসিকে মাতৃভাষার ওপরে স্থান দিয়েছিল, তখন সে দেশের সাহিত্যের ফুরণ হয়নি। ফুরণ হয়েছিল, যেদিন মার্টিন লুথার মাতৃভাষায় পবিত্র বাইবেলের অনুবাদ করে দেশের মানুষের বাইবেল ও মাতৃভাষা উভয়কেই অসীম মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করলেন। রাশিয়াও মাতৃভাষাকে স্বীকার করেই জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পসাহিত্যের গৌরবময় অগ্রগতির পথে বিশিষ্ট মর্যাদায় চিহ্নিত হয়েছে। প্রাচ্যের জাপানও একদিন প্রতীচ্যের শিক্ষাধারাকে গ্রহণ করেছিল। সেদিন তার অগ্রগতি ছিল কুণ্ঠিত । তারপর মাতৃভাষার মাধ্যমেই তার গৌরবময় অগ্রগতির পথে এগিয়ে গেছে।মাতৃভাষাই মানুষের মত প্রকাশের সর্বোত্তম বাহন। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিমূর্ত চেতনা মাতৃভাষার মাধ্যমেই সঠিক প্রতিমূর্তি লাভ করে । যে জাতি পৃথিবীতে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ইত্যাদি কাজে মাতৃভাষার যত বেশি চর্চা করেছে, সে জাতির তত বেশি উন্নতি হয়েছে। মাতৃভাষার ব্যাপক চর্চা ও প্রয়ােগ ছাড়া জাতীয় বিকাশ সম্ভব নয় ।

Next Post Previous Post