অনুচ্ছেদ রচনা : ছিটমহল বিনিময়

 ছিটমহল বিনিময়

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ছিটমহল বিনিময় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ছিটমহল হলো একটি রাষ্ট্রের ভেতর অন্য রাষ্ট্রের কোনো ভূখণ্ড থাকা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হবার সময় এই ছিটমহলের উৎপত্তি হয়। রেডক্লিফের তৈরি মানচিত্রের কারণে এই ছিটমহল সংকটের সৃষ্টি হয়। বিতর্কিত বিভাজনের ফলে এক দেশের ভূখণ্ডে থেকে যায় অন্য দেশের অংশ। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ছিল ভারতের ভূখণ্ডে। ছিটমহলের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫১ হাজার। দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের অধিকাংশ ছিটমহল অবস্থিত। লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি, কুড়িগ্রামে ১২টি ও নীলফামারিতে ৪টি ছিটমহল ছিল ভারতের। বাংলাদেশের ছিটমহলগুলির মধ্যে ৪৭টি কুচবিহার জেলায় এবং ৪টি জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত ছিল। দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে ছিটমহল সমস্যা এক গভীর মানবিক সংকটের সৃষ্টি করে রেখেছিল। কোনোরকম বাছবিচার না করে হুট করে ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা ভাগ করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর ছিটমহলগুলোর তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। 

ছিটমহল বিনিময়

তালিকায় গড়মিল দেখা দেয়ায় আবারো তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অবশেষে ২০১৫ সালের ০১ আগস্ট রাত ১২:০১ মিনিটে দুই দেশ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় ছিটমহলগুলো একে অপরের কাছে ফেরত দেয়। কুড়িগ্রামের দাসিয়ার ছড়া এই সময়ে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়। ৬৮ বছরের পরাধীন জীবন থেকে ছিটমহলের মানুষেরা মুক্তি পায়। তারা নিজেদের পরিচয় ও ঠিকানা খুঁজে পায় এই ছিটমহল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url