বেকার সমস্যা বিষয়ক আলোচনা প্রসঙ্গে একটি ভাষণ তৈরি কর

বেকার সমস্যা বিষয়ক আলোচনা প্রসঙ্গে একটি ভাষণ তৈরি কর

বেকার সমস্যা বিষয়ক আলোচনা প্রসঙ্গে একটি ভাষণ তৈরি কর।

সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত আলোচকবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম

“চিরসুখী জন     ভ্রমে কি কখন
ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে?
কি যাতনা বিষে     বুঝিবে সে কিসে
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে।”

কবি মোহিতলাল মজুমদার বেকারদের কথা ভেবেই কি এ কবিতা রচনা করেছিলেন। বেকারত্বের যন্ত্রণা কেবল বেকাররাই ষোলআনা অনুধাবন করতে পারে। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যার মধ্যে বেকার সমস্যা অন্যতম। দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবসমাজ আজ বেকার। অনেক আশা আর অনেক স্বপ্নকে বুকে লালন করে যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে; তারাই আজ বেকারত্বের যন্ত্রণায় ধুকে ধুকে নিঃশেষ হচ্ছে। এ সংখ্যা কমছেনা, বরং আশঙ্কাজনকহারে কেবল বাড়ছেই। প্রতি বৎসর যে পরিমাণ যুবক-যুবতী শিক্ষা শেষ করছে, সেই পরিমাণ কর্ম কিন্তু খালি হচ্ছে না। ফলে বেকার সমস্যার এ চাপ অব্যাহতভাবে কেবল বেড়েই চলেছে।

একজন শিক্ষিত-কর্মঠ যুবক নিজেকে সম্পূর্ণভাবে তৈরি করে তার যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রকে সেবা দিতে চায় এবং এর বিনিময়ে সে জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা চায়। কিন্তু রাষ্ট্র যখন তা দিতে অক্ষম তখনি শুরু হয় দ্বন্দ্ব। সম্ভবনার ম্লান শিখাটিও যখন নিভে যায়- তখন বহু উচ্ছল তরুণ আস্তে আস্তে হতাশায় নিপতিত হয়। আলোকিত জীবন ছেড়ে তারা পা বাড়ায় অন্ধকারের দিকে। যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার জন্য অনেকে নেশায় আসক্ত হয়। কেউবা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ে ।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে বেকারদের ভাতা আছে। অর্থাৎ চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের হাত খরচের টাকা সরকারি তহবিল থেকে পেয়ে থাকে। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলোতে এরকম কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানে বেকার সমস্যা থেকেই আর মারাত্মক সমস্যার উৎপত্তি ঘটে থাকে। যেমন- আজ বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে— এজন্য বেকার সমস্যাও অনেকটা দায়ী। হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, কালোবাজারি, নেশা ইত্যাদি জঘন্য ঘটনার সাথে আজ বহু শিক্ষিত বেকার জড়িত। দেশের প্রচলিত আইন-অবশ্যই এদেরকে দোষী সাব্যস্ত করবে। কিন্তু কেন এবং কিভাবে এরা বিপথে গেল, সে কারণটিও আজ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তরুণরাইতো রক্ত দিয়েছে; সেই তরুণরা বিপথে কেন— বিশেষভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন। এদেশে যে পরিমাণ দালান-কোঠা আর বাড়ি-গাড়ির উন্নতি হয়েছে, সেই পরিমাণ কলকারখানা তৈরি হয়নি। পাকিস্তান আমলে হাতে গোনা চব্বিশটি পরিবার এদেশকে শোষণ করত। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর আমরা আশা করেছিলাম— মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশে সুষম অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মানুষ পাবে তার গণতান্ত্রিক অধিকার। বেঁচে থাকার গ্যারান্টি। কিন্তু লুটেরার দল এখনো এদেশের সম্পদকে কুক্ষিগত করে যাচ্ছে। তারা সম্পদ বিদেশে পাচার করছে। অর্থ দিয়ে নিজেরা ভোগ বিলাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠছে। কিন্তু শিল্পখাতে কোন অর্থ বিনিয়োগ করছে না। ফলে নতুন কাজ সৃষ্টি হচ্ছে না। এতে করে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আমাদের যে শিক্ষানীতি তা গণমুখী নয়। ভুলেভরা এই শিক্ষানীতি দেশে বেশি বেশি ‘বেকার’ উৎপাদন করছে। বেকারত্বের চাপ হ্রাস করতে হলে কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যার কাজ আছে, জীবিকা অর্জনের সামর্থ্য আছে সেই ‘বাজেট' নিয়ে ভাববে। কিন্তু যে কাজ পাচ্ছে না; সে বাজেটকে মোকাবেলা করবে কিভাবে? সেকি তবে শুধুই বলে যাবে তার অধিকারের কথা। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যেমন কবিতায় উচ্চারণ করেছেন —

দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি যে বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা।
সবাইকে ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url