শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি কর

শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি কর

সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই শীর্ষক আলোচনা সভায় একজন ছাত্রের ভাষণ । 
অথবা, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি কর ।

মাননীয় সভাপতি, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, উপস্থিত সুধীবৃন্দ এবং ছাত্রছাত্রী ভাই-বোনেরা

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং মেরুদণ্ডকে সুস্থ-সবল রাখার জন্য শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে পবিত্রতম বিদ্যাপীঠ। শিক্ষাঙ্গন শিক্ষা, জ্ঞান-সাধনা ও উচ্চ গবেষণার কেন্দ্রস্থল। এখান থেকে উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ করে স্বাধীন দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকেরা সুযোগ্য হয়ে বেরিয়ে আমাদের আশান্বিত করে তুলবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্পর্শে দেশকে প্রত্যাশিত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে। দেশকে করবে আলোকিত। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় সেখানে আজ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত। আজকের ছাত্ররা অবক্ষয়ের অতল গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। তার সামনে আদর্শের আলো নেই। কতিপয় ছাত্র নামধারী বর্বরের ঘৃণ্য কার্যকলাপে নিষ্পাপ অসহায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ হচ্ছে বিঘ্নিত ও অনিশ্চিত। তারা আজ ভয়াবহ সন্ত্রাসের অসহায় শিকার হয়ে পড়েছে।

বন্ধুগণ, শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এখন মহাদুর্যোগময় সময় পাড়ি দিচ্ছি। সংক্রামক ব্যাধির মতো বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষাঙ্গনে আজ বিরাজ করছে, চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা। সীমিত পথচ্যুত নরপিশাচের জন্য অসংখ্য শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীর শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। নিরীহ শিক্ষার্থীরা নীরবে সহ্য করে চলেছে নিজ জীবনের ক্ষতি। এ অবস্থায় ছাত্রসমাজের যে ক্ষতিসাধিত হচ্ছে, তা জাতীয় জীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটাবে। অনেকের মাঝে সংক্রমিত হচ্ছে হতাশার বীজ। বিপথগামী হচ্ছে অনেকে। এভাবে জাতির ভবিষ্যৎ হয়ে ওঠছে অন্ধকারাচ্ছন্ন।

প্রিয় বন্ধুরা, কোন ছাত্র সন্ত্রাস করার মানসে শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি হয় না। সার্বিক পরিস্থিতিই তাদেরকে সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দেয়। উচ্চশিক্ষা লাভ করতে এসে বহু শিক্ষার্থী রাজনীতিবিদদের ক্রীড়ণকে পরিণত হচ্ছে। বই, কলম ফেলে হাতে তুলে নিচ্ছে অত্র। যে ছাত্রের আকাঙ্ক্ষা ছিল মানুষের মতো মানুষ হবে, সেই ছাত্রই ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বেঘোরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে লাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। দেশে চলমান বিশৃঙ্খল রাজনীতিই শিক্ষাঙ্গনগুলোকে অপবিত্র করছে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য একশ্রেণীর অসৎ রাজনীতিবিদ ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কেউবা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ছাত্রসমাজকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ছাত্রদের নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে ছাত্ররা রাজনীতি করে না, ক্ষমতাবানদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্যই তারা রাজনীতির মতো এক মরণ খেলায় মেতে আছে।

সচেতন ছাত্রসমাজকে আজ গভীরভাবে সমস্যাগুলো উপলব্ধি করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সারা বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; বিশেষ করে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠগুলো আজ সন্ত্রাসীদের করায়ত্তে। সেখানে চলছে হল দখলের লড়াই। সেখানে এখন যখন তখন দাঙ্গা, ভাংচুর আর পেশী শক্তির প্রতিযোগিতা। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তাদের হাতে জিম্মি। শিক্ষকরাও তাঁদের হাতে জিম্মি। তারাই রক্ষক, তারাই ভক্ষক, তারাই নীতি নির্ধারক। দেশে এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান সন্ত্রাসীদের হাতের পুতুল। এসব সন্ত্রাসীদের আছে গডফাদার। সেই গডফাদারগণ আবার এত ক্ষমতাধর যে, পুলিশ এমন কি সরকারও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ। তাদের ক্ষমতার শিকড় এত গভীরে প্রোথিত যে, তারা কাউকে পরোয়া করে না।

সন্ত্রাসে ভরপুর আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলোর কদর্য চেহারা দেখে শিক্ষার্থী হিসেবে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অসুস্থতা বিরাজ করছে তার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে আদর্শ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য ছাত্র এবং শিক্ষকের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সচেতনতা। সচেতন ছাত্রসমাজই পারে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সার্থক হোক এই কামনা করে আমার বক্তব্য শেষ করছি। 

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post