জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরী কর

জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরী কর

নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ ।
অথবা, নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থাপনের জন্য প্রধান অতিথির একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরী কর।

সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত সুধীমণ্ডলী

নারী জাতি সমাজের অন্যতম অংশ। সমাজ গঠনে নারী এবং পুরুষ উভয়ের ভূমিকাই অপরিসীম। কিন্তু আমাদের দেশের নারী সমাজ নানাদিক থেকে পশ্চাৎপদ। তারা লাঞ্ছিতা, নিগৃহীতা অর্থাৎ তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। নারী জাতির এ অবস্থার অন্যতম কারণ হলো তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। এর জন্য প্রয়োজন নারী শিক্ষার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা।

সুধী, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভাষায় 

“কোন কালে একা হয়নি ক জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে- বিজয় লক্ষ্মী নারী।” কিংবা
“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

হ্যাঁ, নারী ও পুরুষ সমাজ দেহের দুটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, জগৎ ও জীবনের পরিপূরক। সমাজ গঠনে উভয়েরই সমান ভূমিকা রয়েছে। দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ উভয়কে সমান পদক্ষেপে অগ্রসর হতে হবে। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নারী পুরুষ উভয়কে সমান গুরুত্ব দেয়া হয় না। পুরুষশাসিত সমাজে ছেলেরা যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে, মেয়েরা তা পায় না। তাদেরকে ‘সতী’ ‘সাবিত্রী' নাম দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ধর্মীয় কুসংস্কারের পথ হতে আজও তারা বের হতে পারেনি। সুতরাং দেশের অর্ধেক অংশকে গৃহবন্দী রেখে জাতির উন্নতি মোটেই সম্ভব নয়। এ হীন অবস্থা অবশ্যই দূর করতে হবে। যদিও নারী শিক্ষার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে কিন্তু প্রয়োজন অনুরূপ নয়। পৃথিবীর উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, শিক্ষায় নারী পুরুষ উভয়ই সমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে।

বন্ধুগণ, সমাজের প্রত্যেকটি স্তর থেকে শুরু করে দেশ গঠনেও নারী সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে দেশ গঠনে নারীরাও পিছিয়ে নেই। ভাষা আন্দোলন থেকে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে যে কয়টি আন্দোলন হয়েছে, তাতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আর এ অবদান রাখতে যারা সমর্থ হয়েছে তারা সবাই শিক্ষিত। যতদিন নারীরা শিক্ষা-দীক্ষায় পুরুষের সমকক্ষ হতে না পারবে ততদিন দেশ তথা জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে ‘নেপোলিয়ন' এর উক্তিটি স্মরণীয়— ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি উন্নত জাতি উপহার দেব।' যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশের নারীরা পুরুষের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজও ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন সামাজিক পরিবেশের জন্য নারীকে শিক্ষার আলো হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ প্রত্যেক ধর্মেই নারী শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ রাপ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে নারী পুরুষ উভয়কেই শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (স)-এর বাণী এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য- “বিদ্যা অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ।' প্রিয় সাথীগণ, ‘স্বাবলম্বন' একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হতে পারে। আজ অতীতের অন্ধকার অনেকটা কেটে গেছে। বিগত শতকের অন্ধকারাচ্ছন্ন চার দেয়ালের মাঝে তারা নীরব নিথর হয়ে বসে নেই। নারীরা আজ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে মেধা ও যোগ্যতায় তারা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নেই। এমনি অবস্থায় নারী বলে তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার কোন মানে নেই। সেজন্য পুরুষের শিক্ষার সমপর্যায়েই নারী শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

সুধী, নারীদের গুরুত্ব বিবেচনা করে, নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশে নারী শিক্ষার্থীর অনুপাতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করতে হবে। এক কথায় তাদেরকে সামাজিকভাবে মূল্যায়ণ করতে হবে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন তথাপি আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই হয়ত নারীরা দেশের বৃহত্তর কাজে অংশগ্রহণ করে করে উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। নারীরা উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। দেশের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করুক—এই কামনায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি ।

খোদা হাফেজ।
Next Post Previous Post