বাংলা রচনা : যৌতুক প্রথা

যৌতুক প্রথা

যৌতুক প্রথা

ভূমিকা : যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি এবং জাতীয় জীবনে একটি অভিশাপ। যৌতুক প্রথার সমস্যাটি বর্তমানে বিষবৃক্ষের রূপ ধারণ করেছে। আজকাল পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে এ ভয়ঙ্কর প্রথার কারণে শত শত নারী-নির্যাতিত হয়ে চলেছে। নারী নির্যাতনের সবচেয়ে ভয়াবহ কারণ হিসেবে যৌতুককেই দায়ী করা যায়। যৌতুকের বলি হয়ে বহু নিরাপরাধ নারী বর্তমানে মৃত্যুবরণ করছে। বহু নারীর সুখের সংসার ভেঙে যাচ্ছে, বহু নারীর জীবনে নেমে আসছে অশান্তির করাল ছায়া।

যৌতুক কী : মেয়ের বিয়ের সময় মেয়ের অভিভাবক বরপক্ষের দাবি অনুযায়ী পাত্রকে যে অথ, অলংকাম, আসবাবপত্র ও বিনােদন সামগ্রী প্রদান করে থাকে তার নাম যৌতুক। কোন কোন ক্ষেত্রে বরপক্ষ ও কনেপক্ষের মধ্যে দর কষাকষির মাধ্যমে যৌতুকের পরিমাণ ও সামগ্রী নির্ধারিত হয়। কখনাে কখনাে নির্ধারিত যৌতুক বিয়ের সময় সম্পূর্ণরূপে প্রদান করা হয়, আবার কখনাে আংশিক যৌতুক পরবর্তীকালে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। যৌতুকের ওপর ভিত্তি করে কনের বিয়ে স্থির করা হয় এবং পরবর্তী সংসার জীবনে তার অবস্থান, মর্যাদা ও সুখ-শান্তি এই যৌতুকের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। মেয়েকে ভাল বরের হাতে তুলে দেওয়ার অভিপ্রায়ে অর্থ ও সম্পদ দিয়ে পাত্রপক্ষকে খুশি করা হয়। পাত্রের যােগ্যতা বেশি হলে কিংবা পাত্রীর কোন ত্রুটি থাকলে যৌতুকের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবার দাবি লক্ষ করা যায়। আবার কখনাে অর্থলােভী ভাল ছেলেদেরকে যৌতুকের লােভে কম যােগ্যতাসম্পন্ন বা অসুন্দর মেয়েদের বিয়ে করতে দেখা যায়। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান সকল সমাজে যৌতুক প্রথা প্রচলিত আছে।

যৌতুক প্রথার ইতিহাস : যৌতুক প্রথার উৎপত্তি ঠিক কখন থেকে, এ কথা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। সমাজতাত্ত্বিকদের ধারণা, প্রাচীনকালে বিজিত অনার্য রাজপরিবার ও উচ্চবর্ণের পরিবারগুলাে সমাজে উচ্চ মর্যাদা লাভ করার জন্যে কিংবা নিজেদেরকে বিজেতা আর্যদের সমমর্যাদায় উন্নীত করার জন্যে আর্য-পাত্রদেরকে যৌতুকসহ কন্যা সম্প্রদান করতেন। এক্ষেত্রে, আর্য পাত্রদেরকে মূল্যবান মনে করা হতাে এবং এজন্য এক ধরনের শুল্কের আকারে যৌতুক প্রদান করার রীতি ছিল। এখান থেকেই যৌতুক প্রথা বা পণপ্রথার উদ্ভব ঘটে। তাছাড়া, হিন্দু আইনে কন্যা সন্তানেরা পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। তাই বিয়ের সময় কনের পিতৃপক্ষ সামর্থ্য অনুসারে বর কনেকে অর্থ, অলংকার, পােশাকপরিচ্ছদ, আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক সাংসারিক সামগ্রী যৌতুক হিসেবে দিয়ে থাকে। এরূপে প্রদত্ত ধনসম্পদ শ্বশুর বাড়িতে মেয়ের মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। এভাবে বহুকাল থেকে হিন্দু সমাজে যৌতুক প্রথা প্রচলিত আছে। এই কুপ্রথা মুসলমান সমাজেও সম্প্রসারিত হয়েছে যদিও মুসলিম আইনে পাত্রকে-পাত্রীর পক্ষ থেকে পণ দেবার কোন বিধি নেই। যেহেতু, মুসলিম আইনে মেয়েরা পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, তাই বিয়ের সময় মেয়েকে অর্থ-সম্পদ দেবার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। মুসলিম আইনে বরং বিয়ে করতে হলে পাত্ররাই পাত্রীকে দেনমােহর দেবার বিধান আছে। তথাপি, বর্তমানে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সমাজে যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়েছে। যৌতুক দিতে না পারলে আজকাল ভালাে বরেও ভালাে ঘরে মেয়ে বিয়ে দেওয়া সম্ভবপর হয় না। যৌতুক এত বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে যে, এখন বিবাহ মানেই যৌতুক বােঝায় এবং যৌতুকবিহীন বিবাহ খুব বেশি লক্ষ করা যায় না। তবে বর্তমানে একটি শুত লক্ষণ দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষিত ও সভ্য মুসলিম পরিবারের কোন কোন ছেলে বিয়ের সময় যৌতুককে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছে।

যৌতুকের কারণ : যৌতুক প্রথা প্রচলিত থাকার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কারণগুলাে নিম্নরপ ঃ

ক) হিন্দুধর্মের প্রভাব : বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানের একত্র বসবাসের কারণে এক সম্প্রদায়ের রীতিনীতিতে অন্য সম্প্রদায়ের প্রভাবান্বিত হওয়া স্বাভাবিক। একারণে, হিন্দু সমাজে প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত যৌতুক প্রথা বা পণপ্রথা অন্য ধমাবলমাদের সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে।

খ) অর্থলিপ্সা : মানুষের স্বভাবজাত অর্থলিপ্সা যৌতুক প্রথার একটি প্রধান কারণ। সাধারণ অর্থলিপ্সু বর পক্ষের নিকট থেকে অনায়াস উপার্জন হিসেবে যৌতুক গ্রহণ করে। বরের পিতা ছেলেকে ছােটকাল থাকে লালন করতে এবং ক্ষেত্রবিশেষে লেখাপড়া শেখাতে যে অর্থ ব্যয় করেছে, তা কনের পিতার নিকট থেকে আদায় করে নেওয়া যথাযথ মনে করে।

গ) দারিদ্র্য : বাংলাদেশে আর্থিক সচ্ছলতার অভাব যৌতুক প্রথার অন্যতম কারণ। বিয়ের উপযুক্ত বয়সে ছেলেরা সাধারণত জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই যৌতুকের টাকা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ উপার্জনের জন্যে চিন্তা করে থাকে। আবার কোন কোন অল্পশিক্ষিত যুবক যৌতুকের টাকা নিয়ে বিদেশে যাবার পরিকল্পনা করে। 

( ঘ) কন্যার দোষ-ত্রুটি : কন্যার যে কোন দৈহিক ত্রুটির জন্য বরপক্ষের যৌতুকের দাবি প্রবলতর হয়। কন্যা কালাে,বোবা,খোঁড়া,এক চোখ কানা, বেশি বয়স্ক বা বিধবা ইত্যাদি ত্রুটি যুক্ত হলে পিতাকে অতিরিক্ত যৌতুক দিতে হয়। এরূপ ক্ষেত্রে বরপক্ষ অস্বাভাবিক যৌতুক আদায় করে নিতে সুযোগ গ্রহণ করে।

ঙ) শিক্ষার অভাব : বাংলাদেশে শিক্ষার হার কম। সমাজে অধিকাংশ লােক আশিক্ষা কুশিক্ষা শিকার। বৃহত্তর জনগোষ্টী শিক্ষার আলাে থেকে বঞ্চিত। তাই, পাত্রপক্ষ সামান্য উচ্চ শিক্ষা ও মর্যাদার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌতুক দাবি করে।

চ) নারীর অবমূল্যায়ন : সমাজে নারীদের যথাযথ মূল্য দেওয়া হয় না। কন্যা সন্তানকে পরিবারের আপদ ও পুত্র সন্তানকে সম্পদ মনে করা হয়। নারীদেরকে সমাজে পণ্যসামগ্রীর মতাে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের মনােবৃত্তিম কারণে যৌতুক প্রথা গুরুত্ব লাভ করেছে।

ছ) নারীদের স্বাধীনতার অভাব : এদেশের অধিকাংশ নারী নিরক্ষর ও পরমুখাপেক্ষী। ফলে, পাত্রপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য যৌতুক প্রদান করার চেষ্টা করা হয়।

জ) নারীর পরনির্ভরশীলতা : মেয়েরা বিয়ের আগে পিতার ওপর, বিয়ের পর স্বামীর ওপর ও শেষ বয়সে ছেলে ওপর নির্ভরশীল। নারীদের এই আত্মশক্তির অভাব যৌতুক প্রথার অন্যতম কারণ। বিয়ের পর সারাজীবন তার ভরণপােষণের দায়িত্ব নিতে হবে তার স্বামীকে। এ জন্য স্বামী বিয়ের সময় যৌতুক গ্রহণ করে।

ঝ) সামাজিক প্রতিযােগিতা : সমাজের বিত্তবান লােকেরা মেয়েদের জন্য বর নির্বাচন করার সময় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরিজীবীদের বেশি পছন্দ করেন। তাই এদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য লােভনীয় যৌতুক প্রদানের ক্ষেত্রে একরকম প্রতিযােগিতার আশ্রয় নেন।

ঞ) যৌতুক প্রথাবিরােধী আইনের অভাব : বাংলাদেশে যৌতুক নিষিদ্ধ করে কোন আইন প্রণীত হয় নি। যৌতুক বিরােধী কোন পারিবারিক আইন কিংবা এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষ কোন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যৌতুক প্রথা বহাল রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে মেয়েরা অসহায় জীবন-যাপন করে বলে পাত্রপক্ষের যৌতুকের চাপ প্রতিহত করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয় না। 

যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন : যৌতুক প্রথার নিষ্ঠুরতা বর্তমানে সমাজে ভয়াবহ সমস্যার জনা দিয়েছে। বিয়েতে পণ হিসেবে স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান সামগ্রী, রেডিও, টেলিভিশন, ফ্রিজ, মােটা অংকের নগদ টাকা ইত্যাদির জন্য পাত্রের দাবি উঠে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে গাড়ি, বাড়ি, বিদেশে যাবার টাকা প্রভৃতিও দাবি করা হয়। সবসময় কনের পিতার পক্ষে এতসব দাবি পূরণ করা সম্ভবপর হয় না।  বহু কষ্টে কোন পিতা যদি যৌতুকের দাবি মিটিয়ে মেয়ে বিয়ে দেয় ও পরবর্তীকালে দেখা যায়। পাত্র সময়ে সময়ে বাপের বাড়ি থেকে আরাে টাকা পয়সা এনে দেবার জন্য স্ত্রীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বরপক্ষ মনে করে যৌতুক তাদের ন্যায্য পাওনা এবং এ পাওনার কিছু মাত্র কম হোলে নানা বিপতি সৃষ্টি হয়। যৌতু এর লােভে বিয়ে করে ঘরে বউ আনলেও পরে যৌতুকের পরিমাণ নিয়ে বিরােধের সৃষ্টি হয়। বউয়ের ওপর সকল দায় চাপিয়ে লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা শুরু করা হয়। এভাবে যৌতুকের কারণে অনেক সহজ, সরল, নিস্পাপ মেয়ে নিহত লাঞ্ছিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যে স্ত্রীরা বার-বার বাপের বাড়ি থেকে দাবির টাকা পয়সা ও জিনিসপত্র আনতে পারে, তামা শ্বশুর বাড়িতে আদর-যত্ন পায়; যারা আনতে পারে না, তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এ নির্যাতন নীরবে সহ্য কম ছাড়া বউদের কিছু করার থাকে না। মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারে তারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। পরিণামে কখনাে স্বামী সংসার ত্যাগ করে বাপের বাড়ি ফিরে যেতে হয়; কখনাে বিষ খেয়ে বা গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়। সমাজে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। কখনাে বা স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদেরা মিলে নির্যাতন ও প্রহার করে হত্যা করে বউয়ের লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করে। এরূপ ক্ষেত্রে বড়য়ের পাতা আইনের আশ্রয় নিতে চাইলেও হত্যাকারী শ্বশুরপক্ষ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ও মামলা তুলে নেবার কথা বলে। ভবিষ্যতে সুখ-শান্তিতে স্বামীর ঘর করার স্বপ্ন নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসা কত নারীর সুখের স্বপ্ন যৌতুকের যুপকাষ্ঠে বালি হয়ে যায়, তার ইয়ত্তা নেই। এভাবে আমাদের সমাজে যৌতুকের কারণে প্রতিনিয়ত নারীত্বের অবমাননা ঘটছে, বহু নারীর ঘর ভেঙে যাচ্ছে ও বহু নারী বিনা অপরাধে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। 

যৌতুকের প্রতিকার : যৌতুক যে একটি জঘন্য প্রথা এতে কোন সন্দেহ নেই। এই নিষ্ঠুর প্রথা থেকে নারীসমাজকে মুক্ত করার প্রয়ােজনীয়তা আজকাল সবাই উপলব্ধি করছে। নারীরা যাতে নিগৃহীত না হয়, সে জন্য হীন যৌতুক প্রথা রাহত কম প্রয়ােজন। নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার না হয়ে নারীরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যেন অংশগ্রহণ করতে পারে, সেদিকে সকলকে লক্ষ রাখতে হবে। স্বীকার করতে হবে, নারীরা সমাজের বােঝা নয়, বরং সম্পদ। তারা সম্মান ও শ্রদ্ধা পাবার যােগ্য; এদের শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানাে দরকার। উপযুক্ত শিক্ষায় তারা শিক্ষিত হয়ে সমাজের নানা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে পারলে যৌতুকের নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে। যৌতুকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে যৌতুকবিরােধী আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং তা কঠোরভাবে প্রয়ােগ করতে হবে। বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনবিরােধী আইন ইতােমধ্যেই আছে। এ ছাড়া, যৌতুক আদান-প্রদান নিষিদ্ধ করে কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত এবং এ সকল আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়ােজন। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। এর জন্য সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেরও দরকার রয়েছে। যৌতুক প্রথা নির্মূল করার জন্য দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রচার মাধ্যমগুলাে যৌতুকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারে। তরুণ-তরুণীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষিত পাত্রদেরকে সৎসাহস ও নৈতিক শক্তি নিয়ে এগিয়ে এসে যৌতুককে ‘না’ বলতে হবে। যৌতুক গ্রহণ করবে না বলে তাদের শপথ নিতে হবে। যৌতুকের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে একে সমূলে বিনাশ করতে হবে। এ ব্যাপারে দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নারীদেরকে তাদের অধিকার সম্বনেন্ধ অবহিত করে যৌতুকের মতাে ঘৃণ্য অপরাধের বিরদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সমাজকে অশিক্ষা-কুশিক্ষা থেকে মুক্ত করে তাতে সুশিক্ষার আলাে ছড়িয়ে দিতে হবে। সর্বোপরি, সমাজকে দারিদ্র ও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে রক্ষা করে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই যৌতুকের মতাে একটি কুপ্রথা সমাজ থেকে দূর করা যেতে পারে।

উপসংহার : যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারী সমাজকে রক্ষা করা সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। অর্থলােভী পুরুষ সমাজকে হীন মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। নারীদেরকে যােগ্য সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করতে হবে। তাদেরকে পণ্যসামগ্রী জ্ঞান করা চলবে না। তাদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে স্বনির্ভর হবার সুযােগ দিতে হবে। নারীজাতির স্বার্থ রক্ষাকল্পে সমাজ থেকে যৌতুকের মূল উৎপাটিত করতে হবে। এ জন্য যৌতুকবিরােধী আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়ােজন। যৌতুকরূপ নিন্দনীয় সামাজিক ব্যাধির আক্রমণে কোন নিরপরাধ নারীর জীবন যেন বিপন্ন না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা সকলেরই পবিত্র কর্তব্য।

Next Post Previous Post