অভিজ্ঞতা বর্ণনা : খুশিতেও কান্না পাওয়া

খুশিতেও কান্না পাওয়া

খুশিতেও কান্না পাওয়া

দিন, তারিখ ঠিক করে বলতে পারব না; তবে ঘটনাটি আমার চোখে এখনাে ভেসে বেড়ায়। আমাদের উত্তর পাড়ার কলিমদ্দিনলােকে তাকে সচরাচর কলিম ভ্যানওয়ালা বলেই চিনে। একটামাত্র থাকার ঘর তার, আর একটি রান্না ঘর বললে হয়তাে ভুল হবে। পলিথিনে তৈরি ডেরা আর কি। বর্ষা, বাদলে কিংবা কালবৈশাখীর বাতাসে এটি ছিড়ে গেলে ওর ওপর হেঁড়া কাঁথা, সুপারির পাতা কিংবা কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রেখে কোনােরকমে রান্নার কাজ চলে। আয়শা; কলিমের দ্বিতীয় স্ত্রী । অবশ্য প্রথম স্ত্রী মরে যাওয়ার পর আয়শা আসে। আগের স্ত্রীর কোনাে সন্তান না থাকায় আয়শা এ হতদরিদ্র ঘরে যতদূর সম্ভব সবকিছু গুছিয়ে রাখে। এদের সম্পদ আর সম্পত্তি বলতে একমাত্র মেয়ে কাজল রেখা। কিন্তু সবাই তাকে ডাকে কাজলি বলে । সত্যই নামের ওপরও দারিদ্র্য-দীনতাও ভর করে; নইলে কাজল রেখা কীভাবে কাজলি হয়। শুধু ব্যতিক্রম গ্রামের হাসেন মাস্টার । তিনি একেবারে স্নেহ করে কাজল রেখা বলে ডাকেন। এনিয়েও অনেকের অনেক মত। সে যাইহােক, একদিন হঠাৎ করে বাজারে কলিমুদ্দিনের সাথে দেখা। আগে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতাে, মাঝেমধ্যে ভ্যানের প্রয়ােজন হলে ওকে ডাকা হতাে। কিন্তু ওর চেহারা কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে । আমাকে দেখেই বলল, 'ভাই আপনেরে কয়দিন ধইরা বিচরাই।' বললাম তােমার এমন দশা কেন? জানতে পারলাম তার হার্টে অসুখ ধরা পড়েছে। সে বিস্তারিত বলতেও পারল না। শুধু অনুরােধ করল পরশুদিন তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য। আতিক বলল, ওর মেয়ে এবার প্রাইমারিতে বৃত্তি পেয়েছে। সে কী এ খবর তো ও আমাকে দিলাে না। আতিক বললাে, ওর শরীরটা বােধহয় ভালাে যাচ্ছে না, রজব ডাক্তার বলল, ‘গরিবকে ধরেছে বড়াে লােকের রােগ। যাক শেষপর্যন্ত ওর কথা রক্ষার্থে আতিকসহ ওর বাড়িতে গিয়ে দেখি একটি বড়াে আয়ােজন; অনেক সাংবাদিক এসেছে, অনেক বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি এসেছে। আজ কলিম ভ্যানওয়ালা কলিমুদ্দিন হয়েছে। তার ছবি উঠানাে হচ্ছে কখনাে এককভাবে, কখনাে তার স্ত্রী-মেয়েসহ । আমি আর আতিক এই আনন্দে সামান্য শরিক হলাম মাত্র। মেয়ের এ ভালাে ফলের জন্য আমরা এক হাজার টাকার একটা নােট তার হাতে দিতেই তার চোখ বেয়ে জল নেমে আসল। ভাবলাম মানুষ খুশিতেও কেঁদে ফেলে। এই স্মৃতি আমি কোনােদিনই ভুলতে পারব না। কারণ সেবার যখন ঢাকা থেকে গ্রামে গেলাম; শুনলাম সে আর নেই। জানলাম না; এত খুশির মধ্যে তার চোখ ভরা জলের অন্য কোনাে গল্প ছিল কি না?

Next Post Previous Post