ভাব-সম্প্রসারণ: পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর

পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর
 

পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর।

ভাব-সমপসারণ : বৈচিত্রময় এ পথিবীতে নানা মতের নানা গুণের ও দোষের মানুষ রয়েছে। কিছু মানুষের মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা; আবার কেউ কেউ নানা অপকর্মে নিজেকে লিপ্ত রাখে। ফলে সর্বদাই বহুবিধ পাপ কর্মের ভারে এ বিশ্ব নুয়ে পড়ে। এদের পাপকর্ম নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়; স্বাভাবিকভাবে পাপীরাও ঘণিত । কিন্তু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এমন কিছু পরিস্থিতিই তাকে এ কাজে বাধ্য করে এবং পাপী বানায়। সুতরাং পাপীকে ঘৃণা না করে তার পাপকে ঘৃণা করা বাঞ্ছনীয়। 

বস্তুত এ পৃথিবীতে মানুষ একদম নিস্পাপ হয়ে জন্মায়। এ ধরিত্রীর আলাে-বাতাসে সে বেড়ে ওঠে, ক্রমশ সে সমাজের একজন। মানুষে পরিণত হয়। গহ থেকে শুরু করে সমাজ-সংস্কৃতি সবকিছুই তার এ বেড়ে ওঠাতে প্রভাব বিস্তার করে। একটি ধারাবাহিকতায় একজন মানব শিশু পরিপূর্ণ মানুষ সে নিজেকে প্রকাশ করে। তবে এ মানবজীবনে ছন্দপতন ঘটাও স্বাভাবিক; অনেক সময় কিছু অনিবার্য পরিস্থিতির মুখােমুখি মানুষকে দাঁড়াতে হয়; উত্তেজনা বশত হােক কিংবা রিপুর তাড়নায় হােক মানুষ এমন এক অপরাধ করে বসে- যা সমাজ-সভ্যতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত পাপ হিসেবেই গণ্য করা হয়। আর তাকে চিহ্নিত করা হয় ‘পাপী' বলে। কিন্তু কোনাে মানুষই তাে পাপী হতে চায় না। সকলের মতাে সুন্দর, স্বাভাবিক এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে ‘পাপী'ও পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়। তার হৃদয়ের সােনালি স্বপ্নগুলাে সেও বাস্তবায়ন করতে চায়; সমাজে মানুষের মতাে মানুষ হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়; সেও ফুলকে ভালােবাসে, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যের। জন্য তার মন কেঁদে ওঠে। তবে পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য শুধু ‘পাপী'। পৃথিবীতে অপরাধ বিজ্ঞানীরা মানুষের পাপ কাজ তথা অপরাধ সংঘটনের পিছনে নানাবিধ কারণকে দায়ী করে। প্রথমত একজন শিশুর বেড়ে ওঠাতে তার বাবা-মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাতে প্রভাব ফেলে। তাই একজন অপরাধীর সন্তানও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিতার পথই। অনুসরণ করে। এছাড়াও যে সমাজে বেশিরভাগ মানুষ অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত, সেখানেই একজন ভালাে মানুষও পাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে। আবার সামাজিক নিরপত্তাহীনতা, আর্থনীতিক দৈন্য, রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা ও মানুষকে পাপ কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। সুতরাং পাপীর পাপ কাজের নেপথ্যে বেশ কিছু কারণই প্রধান ভূমিকা রাখে। এ প্রেক্ষাপটে উন্নত বিশ্বে পাপীকে শাস্তি না দিয়ে বরং সংশােধনের ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে ‘কিশাের অপরাধ সংশােধনাগার’ উল্লেখযােগ্য। সুতরাং পাপীর পাপের পিছনে যে সুনির্দিষ্ট কারণগুলাের প্রতি লক্ষ রেখেই পাপীর প্রতি ঘৃণা নয় বরং ভালােবাসা দিয়ে সংশােধনের সুযােগ দিলে সমাজে পাপ কাজ কমে যাবে। 

পাপের শাস্তি পাপীকে পেতেই হবে। তাই পাপ থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে এবং পাপীর প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টি রেখেই সংশােধনের ব্যবস্থাসহ পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

Next Post Previous Post