ভাব-সম্প্রসারণ : কত বড় আমি, কহে নকল হীরাটি, তাই তাে সন্দেহ করি নহ ঠিক খাটি

কত বড় আমি, কহে নকল হীরাটি, তাই তাে সন্দেহ করি নহ ঠিক খাটি


কত বড় আমি, কহে নকল হীরাটি一 
তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাটি।

অথবা, দেখিতে যা বড়, চক্ষে যাহা স্থূপাকার হইয়াছে জড়াে, 
তারি কাছে অভিভূত হয়ে বারে বারে,লুটায়াে না আপনায়। 

ভাব-সম্প্রসারণ : যেকোনাে বস্তুর বাহ্যিক আকৃতিতে অভিভূত না হয়ে তার অভ্যন্তরীণ দিক উপলব্ধিতেই আছে সার্থকতা। বাহ্যিক চাকচিক্য দর্শনে কোনাে কিছুর মন্তব্য করা ঠিক না। আয়তনে বিশাল এবং দেখতে চকচকে হলেই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পারে না। মিথ্যা আবরণ বেশি দিন থাকে না। যারা প্রকৃত অর্থে বড়াে, তারা নিরহংকার ও বিনয়ী হয়। মিথ্যা, ভিত্তিহীন পরিচয়ের অহংকার নিয়ে বেশিদিন চলা যায় না। একদিন না একদিন তার আসল পরিচয় ধরা পড়বেই। 

পৃথিবীতে যারা প্রকৃত মহৎ তাদের সুকৃতি আত্মপ্রচারের অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের প্রকাশ স্বতঃস্ফুর্ত। হীরক মহামূল্যবান ধাতু। খাটি হীরক আকারে ছােটো হয়। পক্ষান্তরে, নকল হীরক আকারে বড়। কিন্তু নকল হীরা যতই বড়াে হােক না কেন, সে আসল হীরার মতাে অপরূপ আলােকরশ্মি বিচ্ছুরণের মাধ্যমে মনােহর বর্ণালিচ্ছটার সৃষ্টি করতে পারে না। তার আকৃতি বা আত্মপ্রচার কোনােটাই তাকে খাঁটি হীরকে পরিণত করতে পারে না। সে মেকি, মেকিই থেকে যায়। বরং নিজের আকৃতি এবং আলােকরশ্মি বিচ্ছুরণে অতিরিক্ত কৃত্রিমতার কারণে সে ধরা পড়ে যায়। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা সত্যিকার অর্থে খুবই তুচ্ছ, নিকৃষ্ট; কিন্তু অহংকারে অন্ধ হয়ে তারা বাইরে প্রচার করে যে, তারা অনেক বড়। শুধু তাই নয়, অনেক সময় হীনমনের মানুষেরা নকল হীরার মতাে আমাদের সমাজের মধ্যমণি হয়ে ওঠে। কিন্তু অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যায় না। তাদের আত্মপ্রচারের মধ্য দিয়ে তারা যে প্রকৃত ছােটো তা ধরা পড়ে যায় । একদিন তাদের সত্যিকার মুখােশ বেরিয়ে পড়ে। তখন মুখ লুকোবার জায়গা থাকে না। বস্তুত নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে কখনাে বড়াে হওয়া যায় না। প্রকৃতই যারা বড়াে তাঁদের নিজের ক্ষমতা জাহিরের প্রয়ােজন হয় না। তাদের সুকৃতির আলােতেই লােকে তাদের পরিচয় পায়। মানুষের মহত্ত্ব প্রমাণিত হয় তার বিশ্বাস, কাজ, মূল্যবোেধ, মন-মানসিকতা ইত্যাদি দিয়ে। আকাশে চাদ উঠলে তাকে দেখার জন্য যেমন আলাে জ্বালাবার প্রয়ােজন হয় না, এমনিতেই দেখা যায়, তদ্রুপ প্রকৃত মহৎ ব্যক্তিদের স্বভাব ও কর্মের গুণে স্বাভাবিকভাবেই চিহ্নিত করা যায় । নিছক বাহ্য আকৃতি কারাে আসল পরিচয় বহন করে না। বিশালকায় ডাইনােসর লক্ষ বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তার দৈহিক আকৃতি তাকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। তেমনি হৃদয়ের বিশালতাই মানুষকে বড়াে করে, দেহের বিশালতা কিংবা অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য বা ক্ষমতার প্রাবল্য তাকে একটুও বড়াে করে না। 

বস্তুত যাদের কর্মের ভান্ডার শূন্য; নিষ্ঠা, সাধনা ও শ্রমে যারা বিমুখ, মনের দিক থেকে যারা নিকৃষ্ট, চিন্তায় যারা ছােটো তারাই আত্মপ্রচার করে থাকে। প্রকৃত গুণিব্যক্তি কখনােই অহেতুক আত্মপ্রচারের কৌশল অবলম্বন করেন না। যার গুণ আছে তার • সুনাম এমনিতেই প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে, মিথ্যা পরিচয়ে যে অহংকার করে, একদিন তার সত্য পরিচয় প্রকাশিত হলে সে লজ্জিত হয় সমাজের কাছে জড় পদার্থ হিসেবে ধিক্কার পায়।

Next Post Previous Post