বাংলা রচনা : ছাত্র-রাজনীতি

বাংলা রচনা : ছাত্র-রাজনীতি
ছাত্র-রাজনীতি 

ছাত্র-রাজনীতি
অথবা, ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি
অথবা, আমাদের রাজনীতি ও ছাত্রসমাজ
অথবা, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রসমাজের রাজনীতি
অথবা, ছাত্র রাজনীতি ও সন্ত্রাস অথবা,
অথবা, সন্ত্রাস সৃষ্টিতে ছাত্র রাজনীতির প্রভাব
অথবা, ছাত্র-রাজনীতির সুফল ও কুফল

[ সংকেত : ভূমিকা; ছাত্র-রাজনীতি; আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির উদ্ভব; ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব, ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা; ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমাজ; ৬৯'-এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্রসমাজ; '৭১'-এর মুক্তি সংগ্রাম ও ছাত্রসমাজ; '৯০'র স্বৈরাচার বিরােধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ; ছাত্র-রাজনীতির আন্তর্জাতিক রূপ; ছাত্র রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট; সন্ত্রাস আকীর্ণ শিক্ষাঙ্গন; সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ছাত্র রাজনীতি; ছাত্র-রাজনীতির ইতিবাচক দিক; ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক দিক; সাম্প্রতিক বিতর্ক; সন্ত্রাস দমনে ছাত্রদের করণীয়; উপসংহার।]

ভূমিকা : সভ্যতার উষালগ্ন থেকে অদ্যাবধি মহান লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে যতগুলাে সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে তার মধ্যে ছাত্র সংগঠন অন্যতম । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বহুমুখী কারণে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র-রাজনীতি আজ বিতর্কের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইদানীং ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনে যেভাবে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে, তাতে ছাত্র-রাজনীতির গৌরবদীপ্ত অতীত ছাড়া বর্তমানে দেখাবার মতাে কোনাে সাফল্য থাকছে না। 

ছাত্র-রাজনীতি : লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশপ্রেমিক ছাত্রসমাজ তাদের নিজেদের ও দেশমাতৃকার স্বার্থে অত্যাচারী শাসক ও শােষক শ্রেণির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে তাই ছাত্র রাজনীতি। ছাত্র-রাজনীতির মাধ্যমে ছাত্ররা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতি যখনই কোনাে অশুভ শক্তির নিগড়ে বাঁধা পড়েছে, তখনই ছাত্ররা শৃঙ্খল ভঙ্গের জন্য নিঃশঙ্কচিত্তে এগিয়ে এসেছে। 

আমাদের দেশে ছাত্র-রাজনীতির উদ্ভব : বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র-রাজনীতি শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে ছাত্র-রাজনীতির সূচনা খুব একটা আগে নয়। বলা যায়, উনিশ শতকের প্রথমার্ধেই আমাদের দেশে ছাত্র-রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়। এর আগেও যে ছাত্র-রাজনীতি ছিল না এমন নয়, তবে তা উল্লেখযােগ্য নয়। আসলে ১৯২১ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ অঞ্চলে ছাত্র-রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চল্লিশের দশকের শেষার্ধে ‘ভাষা আন্দোলন' ইস্যুকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশে ছাত্র-রাজনীতির উত্থান ঘটে। ছাত্ররা লেখাপড়ার সাথে সাথে শােষক শ্রেণির বিরুদ্ধে সােচ্চার হতে থাকে। তারা বুঝতে সক্ষম হয় যে, শুধু পড়াশুনার মাঝেই তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়। 

ছাত্র-রাজনীতির গুরুত্ব : ছাত্র-রাজনীতির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় কবি নজরুলের ‘আমরা শক্তি আমরা বল আমরা ছাত্রদল’এ কথার মধ্যেই ছাত্র-রাজনীতির বীজ লুকায়িত আছে। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বৈরাচার বিরােধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ যে ভূমিকা পালন করেছে সচেতন লােক মাত্রই তা অবগত আছেন । 

ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশ বিভাগের পরে বাঙালি জাতি যে সুখের স্বপ্ন দেখেছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক ও শােষক গােষ্ঠী সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। তারা প্রথমেই আঘাত হানে আমাদের ভাষার ওপর। ফলে বাংলার ছাত্রসমাজ বিদ্রোহী হয়ে উঠে। ৫২'র ২১ ফেব্রুয়ারি, সরকারের জারিকৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য মিছিলে নামে। কিন্তু শাসকগােষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, সফিক, জব্বারসহ অনেকে। প্রাণ হারায়। অবশেষে ১৯৫৬ সালে সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। 

'৬২'র শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমাজ : ৬২'র শিক্ষা আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজ যে ভূমিকা রেখেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের রিপাের্ট প্রকাশিত হলে এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ঢাকাসহ সারা বাংলায় প্রবল আন্দোলন গড়ে তােলে। ফলে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তান সরকার শিক্ষানীতির আমূল। পরিবর্তন আনয়ন করতে বাধ্য হয়।

'৬৯'-এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্রসমাজ : মৌলিক গণতন্ত্র, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও পাকিস্তানের মার্শাল ডিক্টেটর আইয়ুব খানের। নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলার সর্বত্র ১৯৬৯ সালে এক দুর্বার গণ আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্রসমাজ ১১ দফা কর্মসূচি নিয়ে গণ আন্দোলনের সূচনা করে। আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে অবশেষে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে । কিন্তু তারপরও ছাত্ররা তাদের অপরাপর দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং জাতীয় আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। 

'৭১'-এর মুক্তি সংগ্রাম ও ছাত্রসমাজ : ৭১'র মুক্তি সংগ্রামে বাংলার ছাত্রসমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। '৭১'র ২৫ মার্চ মধ্যৱাতে ঢাকার ঘুমন্ত মানুষের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানাে হয় তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অন্যান্য। মুক্তি পাগল মানুষের সাথে ছাত্ররা গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পশ্চিমা নরপশুদের বিরুদ্ধে সম্মুখ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৭১'-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার ছাত্রসমাজ যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, দেশবাসী তা চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। 

'৯০'-এর স্বৈরাচার বিরােধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ : '৯০'র স্বৈরাচার বিরােধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ঘােষিত কর্মসূচিতে ২৮ নভেম্বর ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিলে নামলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ছাত্রদেরকে সমর্থন জানায়। উপায়ান্তর না দেখে এরশাদ সরকার পদত্যাগ করলে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। 

ছাত্র-রাজনীতির আন্তর্জাতিক রূপ : ছাত্র-রাজনীতি আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছাত্র-রাজনীতি রয়েছে । ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরশাসক ছিলেন সুহার্তো। সেদেশের ছাত্রসমাজ ৩ দশকেরও অধিককালের স্বৈরশাসক সুহার্তোকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। ইন্দোনেশিয়ার ছাত্রসমাজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ গােটা বিশ্বের নেতৃবৃন্দ জোরালাে সমর্থন জানিয়েছে। ছাত্র-রাজনীতির যে প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে তা আজ গােটা বিশ্ববাসীর কাছে সহজেই অনুমেয়। 

ছাত্র-রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট : বর্তমান ছাত্র-রাজনীতি আর অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারছে না। এরা আর দেশের জাতীয় স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। কারণ বর্তমান ছাত্র-রাজনীতি সন্ত্রাস নামক কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলােতে দেখা যায়, ছাত্ররা রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ছাত্রদের বরাদ্দকৃত হলগুলােতে চলছে ক্ষমতার দাপট । সাধারণ ছাত্ররা নিয়মের মধ্যে কখনাে সিট পায় না। অথচ অছাত্ররা এসে হলে থাকে । তাদের কাছে থাকে নানা অস্ত্র । যেকোনাে সময় তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আর যেসব সাধারণ ছাত্র-রাজনীতির আশ্রয়ে হলে সিট নেয় তাদেরকে আবার বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে জোর করে নেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনাে বিচার নেই, প্রতিরােধের ব্যবস্থা নেই । কোনাে কারণে একছাত্র আরেক ছাত্রের মধ্যে বা তাদের কোনাে গ্রুপের মধ্যে বিবাদ দেখা দিলে একজন আরেকজনকে খুন করে ফেলে। এসব নানা বিশৃঙ্খলার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলাে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ছাত্রছাত্রীরা সেশন জটে পড়ছে। 

সন্ত্রাস আকীর্ণ শিক্ষাঙ্গন : আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলাে বর্তমানে সন্ত্রাসে ছেয়ে গেছে। মেধাবী ছাত্ররা যেখানে দেশ গড়ার কারিগর হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা হলাে কুখ্যাত সন্ত্রাসী । বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলােতে সন্ত্রাসের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে । সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হচ্ছে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। সন্ত্রাসী ছাত্ররা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে প্রকাশ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। আর তাদের উসকানি দিচ্ছে রাজনীতিক দলের নেতৃবৃন্দ। নিজেদের প্রভাব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এসব রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাসীদের অস্ত্রশস্ত্রের যােগান দেয়। তাদের পরামর্শমতাে ছাত্র পরিচয়ের সন্ত্রাসীরা সর্বদা ক্যাম্পাসে তৎপর থাকে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথেই তারা সন্ত্রাসী হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। বােমা আর বুলেটের শব্দে পুরাে ক্যাম্পাস গর্জে ওঠে। এভাবে অনেক অসহায় সাধারণ ছাত্র প্রাণ হারায়। 

সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ছাত্র-রাজনীতি : আমাদের দেশে ব্যাপকহারে সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলাে ছাত্র-রাজনীতি । ছাত্রদের প্রধান কাজ হলাে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তােলা । কিন্তু আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলােতে ছাত্র-রাজনীতি বিদ্যমান থাকায় ছাত্ররা এ রাজনীতিতে নানাভাবে জড়িয়ে পড়ছে। আর রাজনীতির যে মহৎ উদ্দেশ্য তা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। তারা ছাত্ররাজনীতির অপপ্রয়ােগ করছে। তারা হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। ক্ষমতার লােভ, দাপটের অহমিকা তাদের আঁকড়ে ধরে। ফলে তারা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যায়। প্রতিদিন নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। খুন, হানাহানি, সংঘর্ষ প্রভৃতি চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা নির্বিঘ্নে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে না এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারে না। 

ছাত্র-রাজনীতির ইতিবাচক দিক : ছাত্ররা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার । আজকে যে ছাত্র, সে একদিন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেতে পারে। আর ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তার দেশ পরিচালনা করা অনেক সহজ হবে। কেননা রাজনীতি ছাড়া এসব বিষয় জানা সম্ভব নয়। আর নেতৃত্বের যে গুণাবলি তা তখন থেকেই অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই ছাত্র-রাজনীতি বিদ্যমান থাকা যৌক্তিক। 

ছাত্র-রাজনীতির নেতিবাচক দিক : প্রকৃত ছাত্র-রাজনীতির কোনাে নেতিবাচক দিক নেই। যে ছাত্র-রাজনীতির নেতিবাচক দিক বর্তমান সেটি হলাে তথাকথিত রাজনীতি। অধুনা ছাত্র-রাজনীতি অনেকাংশে তথাকথিত রাজনীতিতেই পরিণত হয়েছে। ছাত্ররাজনীতিতে প্রবেশ করেছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মারামারি, কাটাকাটি ইত্যাদি। ছাত্র-রাজনীতির এহেন পরিস্থিতি দেশ ও জাতিকে ক্রমান্বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে । সন্ত্রাসের কারণে প্রতি বছর অনেক ছাত্রের তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে, আবার অনেকে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে। শুধু ছাত্ররাই নয় শিক্ষকসহ অনেকেই সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের মার্কেটগুলাে থেকে সন্ত্রাসীরা প্রচুর চাদা আদায় করছে। অস্ত্রের ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলােতে বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্ররা প্রায়শ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

সাম্প্রতিক বিতর্ক : ছাত্র-রাজনীতি নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ ছাত্র-রাজনীতি উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছেন, আবার কেউ কেউ ছাত্র-রাজনীতির পক্ষে অভিমত রাখছেন । যারা ছাত্র-রাজনীতির বিপক্ষে কথা বলছেন, তাদের বক্তব্য হলাে- রাতারাতি বড়াে হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, হীন স্বার্থের মানসে সরকার ও কতিপয় রাজনীতিক দল কর্তৃক সন্ত্রাসকে উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি ছাত্র-রাজনীতিতে সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্র-রাজনীতি বিলুপ্ত করা দরকার । পক্ষান্তরে, ছাত্ররাজনীতির পক্ষে বক্তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন। আমরা মাথা ব্যথা হলে ঔষধ সেবন করি। কিন্তু মাথা কেটে ফেলে দেই না। তাই সন্ত্রাসের ভয়ে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করার আদৌ কোনাে হেতু নেই । ছাত্র রাজনীতিকদের বুঝতে হবে তারা জাতির ভবিষৎ নিয়ন্ত্রক, তাই তাদের অবশ্যই সন্ত্রাসমুক্ত থাকতে হবে। সরকার ও রাজনীতিক দলগুলােকে নিজেদের স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা ও নীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে । 

সন্ত্রাস দমনে ছাত্রদের করণীয় : আমাদের দেশের বিভিন্ন জাতীয় সমস্যায় ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে । সন্ত্রাস বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের আরেকটি জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। আর এ সমস্যা কেবল ছাত্রসমাজই পারে নির্মূল করতে । তার জন্য প্রথম করণীয় হলাে শিক্ষাঙ্গন থেকে রাজনীতির চাদরে ঢাকা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের অসুস্থ রাজনীতির পথ রুদ্ধ করা। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়ন করা । সবকথার উর্ধ্বে রাজনীতির সাথে নৈতিকতার সংমিশ্রণ ঘটানাে আজ সময়ের দাবি। সন্ত্রাস দমনে ছাত্ররা এগিয়ে এলে রাজনীতির দুবৃত্তরাও তাদের কালাে হাত গুটিয়ে নেবে। প্রয়ােজনে সরকারের সহায়তা নিয়ে রাজনীতির ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ণ ও তা কার্যকরী করতে হবে । 

উপসংহার : অতীতের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের দেশে ছাত্র-রাজনীতির গুরুত্ব অত্যধিক । আমরা অবশ্যই সুষ্ঠু ও ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব স্বীকার করি । তাই বলে রাজনীতির নামে দেশে বিভিন্ন অপকর্ম ও বিশৃঙ্খলার প্রসার ঘটবে তা মেনে নেওয়া যায় না। একারণে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও কলুষিত চিন্তা-চেতনা বাদ দিয়ে আমাদের স্বপ্নের সােনার বাংলায় সুষ্ঠু ও সুন্দর ছাত্র-রাজনীতি অব্যাহত থাকুক এটিই সকলের কাম্য।
Next Post Previous Post