বাংলা রচনা : মানব কল্যাণে বিজ্ঞান

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান 

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান
অথবা, মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান
অথবা, আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান
অথবা, মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
অথবা, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান।
অথবা, দৈনন্দিন কাজে বিজ্ঞান।
অথবা, বিজ্ঞান ও বর্তমান প্রযুক্তি
অথবা, সভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের অবদান
অথবা, বিজ্ঞান ও আধুনিক সভ্যতা।

 
[সংকেত : ভূমিকা; বিজ্ঞানের সৃষ্টি; বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা; দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান; কায়িক শ্রম লাঘবে বিজ্ঞান; কৃষিকাজে বিজ্ঞান; উন্নত চিকিৎসায় বিজ্ঞান; শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান; তথ্য প্রদানে বিজ্ঞান: সম্পদ আহরণে বিজ্ঞান; আবহাওয়া নির্ণয়ে বিজ্ঞান; যােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান; বিনােদনে বিজ্ঞান; শহুরে জীবনে বিজ্ঞান; গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞান; দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের 
অপকারিতা; উপসংহার । ]

ভূমিকা : মানুষ একসময় গুহায় বাস করত। কিন্তু এখন মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আধুনিক জীবনে পদার্পণ করেছে বসবাস করছে আকাশচুম্বী অট্টালিকায় । বিজ্ঞানের আশীর্বাদে পৃথিবী আজ মানুষের হাতের মুঠোয় । বিজ্ঞানের অবদানে পথিবী আজ আলাে ঝলমলে; মানবজীবন সুখী-সমৃদ্ধ, আরাম-আয়েশপূর্ণ ও নিরাপদ। মানবজীবনের কথা চিন্তা করে আদিমকালে গােপনে বিজ্ঞানচর্চা শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ আকাশে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে । দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান রয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতিও ত্বরান্বিত হচ্ছে । বিজ্ঞানের অবদানে মানুষের বিজয়ের কথা প্রকাশ পেয়েছে কবির কবিতা 

কে আজ পৃথ্বিরাজ জলে, স্থলে, ব্যোমে
কার রাজ্য পাট। 

বিজ্ঞানের সৃষ্টি : প্রকৃতির অন্ধ শক্তির ওপর জয়ী হওয়ার প্রয়ােজনেই একদিন সৃষ্টি হয়েছিল বিজ্ঞানের । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীবৃন্দ মানুষের কল্যাণের জন্য ডুব দিয়েছিলেন প্রকৃতির অতলান্ত রহস্য সাগরে । সেই রহস্যাবরণ উন্মােচন করে মানুষের প্রতিভা আবিষ্কার করেছে প্রকৃতির কত গােপন সম্পদ ও শক্তি । জলে-স্থলে-আকাশে মানুষের আজ অপ্রতিহত গতি । বর্বর জীবনকে পশ্চাতে ধাওয়া করে বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ সভ্যতার আলােকে উদ্ভাসিত ও সম্পদশালী । মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, জীবনের স্বপ্ন ও কল্পনার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে বিজ্ঞান। 

বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা : আদিমযুগে নিতান্ত প্রয়ােজনের তাগিদে মানুষের অবচেতনে মনে বিজ্ঞানের সূত্রপাত ঘটেছিল । তখন থেকেই মানুষ মানবকল্যাণের লক্ষ্যে বিজ্ঞানের নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকে এবং সফল হয়। সেই থেকে বিজ্ঞানই মানুষের পরম বন্ধু হয়ে ওঠে । বিজ্ঞান সম্পর্কে মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন

Science is reality
Science is bonafide
Science is your constant friend
Science is always creative.

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি মুহূর্তও ভাবা যায় না। আধুনিক জীবন বলতে আমরা বুঝি যে জীবন চিন্তা-চেতনায় প্রগতিশীল, নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন এবং নতুনকে গ্রহণ করতে বদ্ধপিরকর। তাইতো অন্ধকার গুহার পরিবর্তে আলােকপিয়াসী হয়ে মানুষ বেছে নিয়েছে সুদৃশ্য নিকেতন । বিজ্ঞানের অবদান এ পরিবর্তে  প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করা বা মাইক্রো ওভেনে রান্না করা খাদ্য খাচ্ছে লজ্জা নিবারণে তাের করেছে শাশ-পানি ব্যান্ডের পছন্দের পােশাক। মােটকথা বিজ্ঞানের স্পর্শে আজ আমাদের জীবন হয়েছে সহজ ও সুন্দর। বিজ্ঞানের যাত্রা অরর প্রথম ধাপেই। দেখা যায় বিদ্যুতের বিস্ময়কর অবদান। তারপর এসেছে টেলিফোন, মুঠোফোন, টেলিভিশন, জেনারেটর, কাতল, প্যাপটপ, ক্যামেরা, লিফট ইত্যাদি। আর এভাবেই অতীতের গ্লানি চিহ্ন মুছে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় আজ আমরা আধুনিক । 

কায়িক শ্রম লাঘবে বিজ্ঞান : মানবকল্যাণের কথা চিন্তা করেই প্রাচীন যুগে বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আধুনিক বিশ্বে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে। কায়িক শ্রম লাঘবেও বিজ্ঞানের অবদান অনস্বাকায়। একসময় অল্প কিছু। উৎপাদন করতে মানুষকে অনেক পরিশ্রম করতে হতাে। কিন্তু বিজ্ঞানের বদৌলতে শিল্প-বিপ্লবের ফলে কল-কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এতে উৎপাদন বেড়েছে আর লাঘব হয়েছে কায়িক শ্রম। 


কৃষিকাজে বিজ্ঞান : আদিম মানুষের জীবিকা উপার্জনের একমাত্র পথ ছিল কৃষি । আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত । কৃষিকাজের উন্নয়নের জন্যও বিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। দীর্ঘ সময়। ও অনেক পরিশ্রম করে সনাতন পদ্ধতিতে লাঙল-জোয়াল-গােরু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে দ্রুত চাষ করার জন্য বিজ্ঞান ট্রাক্টর। আবিষ্কার করেছে । বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও অধিক ফলনশীল বীজ, ফসলের ক্ষতিকারক পােকা ধ্বংসের জন্য কীটনাশক আবিষ্কার বিজ্ঞানের অবদান। তাছাড়া জমিতে সেচ প্রদান, ফসল রােপণ, কর্তন, মাড়াইসহ বেশাকছু কাজের জন্য যন্ত্র। আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান । 


উন্নত চিকিৎসায় বিজ্ঞান : চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞানের কল্যাণে রাতারাতি আধুনিক চিকিৎসা উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে। বিজ্ঞানের কল্যাণেই আধুনিক মানুষ রােগহীন সুস্থ জীবনযাপন করছে, ছােটো-বড়াে নানা প্রকার। রােগের হাত থেকে সহজেই মুক্তি পাচ্ছে। রােগাক্রান্ত হওয়ার আগেই মানুষ প্রতিরােধের ব্যবস্থা করছে । যক্ষ্মা, হাট, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, শিরা, যকৃৎ, ধমনি, পাকস্থলীতে আক্রান্ত রােগও বিজ্ঞানের কাছে হার মেনেছে । তাছাড়া রােগ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনােগ্রাফি, ইটিটি, এন্ডােস্কপি যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্ত থেকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ নিতে সৃষ্টি হয়েছে টেলিমেডিসিন পদ্ধতি । কৃত্রিম হাত-পায়ের ব্যবস্থা এমনকি নিঃসন্তান দম্পতির জন্য টেস্টটিউব বেবির ব্যবস্থাও করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান। 


শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিশেষ অবদান রেখেছে। কাগজ, কলম ও মুদ্রণ যন্ত্র শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। মুদ্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে জ্ঞানী-গুণীর কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে । মূল্যবান গ্রন্থগুলাে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। বর্তমান যুগে ঘরে বসে ইন্টারনেটে কুরআন শরিফ থেকে শুরু করে সকল বই পড়া যায় । তাছাড়া রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেটের মাধ্যমেও শিক্ষা লাভ করা যায় । 


তথ্য প্রদানে বিজ্ঞান : বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে যেকোনাে আলােড়িত ও আলােচিত ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । কম্পিউটার, টেলিফোন, মুঠোফোন, ই-মেইল, এসএমএস, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনাে স্থানে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্তে একে অপরের সাথে যােগাযােগ করতে পারে বিজ্ঞানের কল্যাণে। তথ্য আদান-প্রদানের আরও উন্নত যন্ত্র টেলিপ্যাথি আবিষ্কারের পথে । এই যন্ত্রের মাধ্যমে কথা। বলার সময় অপর প্রান্তের মানুষের মনােভাব অনুভব করা যাবে । তাছাড়া ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পত্রিকা পড়া সম্ভব হচ্ছে । আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের জীবনের জটিলতাকে সকল ক্ষেত্রে সহজ থেকে সহজতর করে দিয়েছে । 


সম্পদ আহরণে বিজ্ঞান : পৃথিবীতে বহু ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। এই সম্পদ আহরণ করতে আবিষ্কার করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি । বৈজ্ঞানিক এ পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানুষ ভূ-গর্ভ থেকে তেল, গ্যাস, কয়লা, লােহা, চুনাপাথরসহ নানা সম্পদ আহরণ করছে এবং একেকটা সম্পদ একেক কাজে লাগিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। সমুদ্রের স্রোত,। নদীর পানি বাতাসের গতিকেও বিজ্ঞান মানুষের কাজে লাগাচ্ছে। কাজে লাগাচ্ছে পরিত্যক্ত বর্জ্য ও পশু-পাখির বিষ্টাকেও। 


আবহাওয়া নির্ণয়ে বিজ্ঞান : এক সময় মানুষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝে নিত অভিজ্ঞতা ও ঋতু চক্রের মাধ্যমে । কোন ঋতুতে আবহাওয়া কেমন ছিল তার ওপর ভিত্তি করে তারা চলত। এতে বড়াে বড়াে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাতাে এবং প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হতাে। পূর্বে বন্যা, সুনামি, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়ে অসংখ্য মানুষ, গবাদি পশুসহ ঘরবাড়ি ও পরিবেশের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষকে আর এই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ এক-দু'দিন আগেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যায়। ফলে তারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যথাসময়ে। অবস্থান নেয় এবং দুর্যোগ মােকাবিলা করতে প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি নেয় ।


যােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান : এক সময় মানুষ ছিল গৃহকেন্দ্রিক। কোথাও যেতে হলে পায়ে হেটে যেতে হতো। কেননা তখন কোনাে যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান যােগাযােগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে। এ যুগে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যানবাহনের মাধ্যমে মানুষ এখন জলে, স্থলে, আকাশে, গ্রহে, উপগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে । স্থলপথে গাড়ি, টেন, জলপথে জাহাজ, আকাশপথে বিমান, ভিন্ন গ্রহে যেতে রকেট ইত্যাদি বিজ্ঞানেরই অবদান। বিনােদনে বিজ্ঞান : মন ভালাে তাে সব ভালাে । মন ভালাে থাকলে পড়ালেখা, কাজকর্ম সবকিছুই ভালাে লাগে। তাই মানুষের। মনকে প্রফুল্ল রাখতে বিজ্ঞান নানা প্রকার বিনােদনের ব্যবস্থা করেছে। বিজ্ঞান আধুনিক মানুষের বিনােদনসঙ্গী হয়ে ধরা দিয়েছে । বিশ্বসংস্কৃতি আজ বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়েছে। মােবাইল, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ক্যামেরা, ডিভিডি, ভিসিডি, ভিসিয়ার, ডিশ, বৈদ্যুতিক বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে । তাই কর্মশেষে কর্মক্লান্ত মানুষ বিনােদনের মাধ্যমে মনকে উৎফুল করে তােলে। 

শহুরে জীবনে বিজ্ঞান : শহুরে জীবনে মানুষ আর বিজ্ঞান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত । শহরে আমাদের ঘুম ভাঙে গাড়ির হর্ন, কলিংবেল, গান বাজনা ও এলার্মঘড়ির শব্দে । ঘুম থেকে উঠে দিনের শুরু হয় টুথপেস্ট আর টুথব্রাশ দিয়ে। এরপর আসে সংবাদপত্র । তারপর গ্যাস অথবা হিটার কিংবা স্টোভে আমরা তাড়াতাড়ি রান্না করে খাই । রিকশা, অটোরিকশা, বাস, ট্রেন বা মােটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে পৌছাই। সিড়ির বদলে লিফটের সাহায্যে উপরে উঠে অফিস করি । টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে দূর-দূরান্তে খবর পাঠাই। কম্পিউটারে কাজের বিষয় লিখে রাখি । ক্লান্ত দেহটাকে আরাম দেওয়ার জন্য এসি কিংবা ইলেকট্রিক পাখার নিচে বসি– এভাবেই সারাদিন বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জীবন পরিচালনা করছি। আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দিনের অবসন্নতা দূর করতে মিউজিক প্লেয়ার কিংবা টিভি চালিয়ে মনটাকে সতেজ রাখতে চেষ্টা করি। ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটারে তাদের নােট রাখে, কখনাে কখনাে ভিডিও গেমস খেলে । এমনিভাবে জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই আমরা বিজ্ঞানের অবদান অনুভব করি । 

গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞান : যােগাযােগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদানের জন্য মানুষ আজ দূরকে করেছে নিকট প্রতিবেশী। বাস, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মােটরসাইকেল সবই এখন গ্রামীণ জীবনের অংশ । ফলে বিজ্ঞান শহরজীবনকে অতিক্রম করে পৌছে গেছে গ্রামে। বর্তমানে গ্রাম্য জীবনেও বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, টিভি, রেডিও মােবাইল ফোন, টর্চ, স্নাে, পাউডার, সাবান, আয়না-চিরুনি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, ট্রাক্টর ইত্যাদি এখন গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। শহরের মানুষ যেমন নিজেদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে বিজ্ঞানকে নিত্যসঙ্গী করেছে তেমনি গ্রামের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনেও ইলেকট্রিক হিটার, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি অপরিহার্য হয়ে। উঠেছে। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অপকারিতা : বিজ্ঞানের স্পর্শে একদিকে যেমন মানুষের জীবন হয়েছে অর্থপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী, অন্যদিকে এর বীভৎস রূপও মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে অনিঃশেষ বেদনায় । বর্তমান সভ্যতার একটি কদর্য ও ভয়ানক রূপ হলাে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার । এই অস্ত্র ক্রমশ মানব-সভ্যতাকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কম্পিউটার নামক মহাশক্তির আবিষ্কার ও সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার প্রতিটি দেশে বাড়িয়ে দিয়েছে বেকারত্ব। কম্পিউটারের মাধ্যমে মানুষ এখন সাইবার অপরাধী হ্যাকিংসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে, যার গতি রােধ করা প্রায় অসাধ্য। সামাজিক যােগাযােগের মাধ্যম যেমন— ফেসবুক, টুইটার, ভিডিও, শেয়ারিং সাইট, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে ভুল তথ্য নিমেষেই লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর কাছে পৌছে দেয়, যা সহিংসতা সৃষ্টি করে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্র সংবলিত বড়াে বড়াে শিল্পকারখানা ও যন্ত্রচালিত গাড়িগুলাে নষ্ট করছে পরিবেশ। তাছাড়া বিশ্বের প্রতিটি দেশে তথ্য প্রযুক্তির ফলে সংঘটিত হয় বড়াে বড়াে ডাকাতি । তবে সত্যিকার অর্থে এসবের জন্য আমরা বিজ্ঞানকে দায়ী করতে পারি না। বরং প্রযুক্তির অপপ্রয়ােগকারী মানুষেরাই এর জন্য দায়ী। 

উপসংহার : বিজ্ঞান অনুসন্ধানী, আধুনিক জীবনে ক্রমপ্রবহমান ছন্দের মূল চালিকাশক্তি। বিজ্ঞানের একের পর এক আবিষ্কারে মানুষ স্তম্ভিত হচ্ছে। শহরজীবনে বিজ্ঞান যেমন প্রভাব বিস্তার করেছে, গ্রামীণ জীবনধারায় ঠিক সেভাবে সম্ভব হয়নি। তাই সচেতন জনসাধারণের প্রত্যেকেরই কর্তব্য গ্রামীণ জীবনধারাতেও বিজ্ঞানের বিস্তৃত ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। কেননা, বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড গ্রামবাংলায় বিজ্ঞানের যথার্থ প্রয়ােগই পারে তার উদ্ভাবনী শক্তিকে যাদুস্পর্শে সমৃদ্ধ করতে ।
Next Post Previous Post