অনুচ্ছেদ রচনা : তথ্য-প্রযুক্তি

অনুচ্ছেদ রচনা : তথ্য-প্রযুক্তি
অনুচ্ছেদ রচনা : তথ্য-প্রযুক্তি 

অনুচ্ছেদ রচনা : তথ্য-প্রযুক্তি 

আধুনিক জীবন ও তথ্য-প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তথ্য-প্রযুক্তি বলতে সাধারণত তথ্য রাখা এবং পদ্ধতিগতভাবে একে ব্যবহারে প্রযুক্তিকেই বােঝানাে হয়- যা ইনফরমেশন টেকনােলজি বা সংক্ষেপে ‘আইটি’ (IT) নামে অধিক পরিচিত । অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে প্রযুক্তিগত যে বিপ্লব দেখা দিল তারই চেনা পথ ধরে ঘটল শিল্পবিপ্লব । দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ল উন্নত দেশগুলােতে। ক্রমে কুটিরশিল্পের স্থলে এলাে যন্ত্রশিল্প, রক্ত মাংসের মানুষও পরিণত হলাে যন্ত্রে । এর কিছুটা নেতিবাচক দিক থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তির। কল্যাণেই মানুষ বিশ্বকে জয় করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সারা পৃথিবীতে নবচেতনার সঞ্চার হয়েছে। মানুষের যাবতীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্যে এমনকি মানুষের জন্য যে ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্র তৈরি হয়েছে তাতেও তথ্য-প্রযুক্তির অবদান রয়েছে। সুতরাং তথ্য-প্রযুক্তি মােটেই উপেক্ষণীয় বিষয় নয়, বরং এটি একটি সমন্বিত প্রযুক্তি যা যােগাযােগ, টেলিযােগাযােগ, ভিডিও, কমপিউটিং, সম্প্রচারসহ আরও অনেক প্রযুক্তির সম্মিলন। তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিনিময় বা পরিবেশনের মাইক্রোইলেকট্রনিক ব্যবস্থাই এ তথ্য প্রযুক্তির বহুবিধ ব্যবহারের কতিপয় সামগ্রী। প্রযুক্তির নব নব উদ্ভাবনের প্রক্রিয়ায় উদ্ভব ঘটেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের, যা নির্ভুল তথ্য আদান-প্রদানে একটি টেকসই মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত । এছাড়াও ফ্যাক্স, সেলুলার ফোন, পেজার, স্যাটেলাইট, টেলিফোন আমাদের জীবনযাত্রাকে দিচ্ছে ভিন্নতর রূপ । তথ্য-প্রযুক্তির একটি অবিস্মরণীয় সংযােজন হলাে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল— যা একই সময়ে বিপুল পরিমাণ তথ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছে । আন্তঃমহাদেশীয় যােগাযােগের এই সড়কে বাংলাদেশও সরাসরি জড়িত। বর্তমানে টেলিকনফারেন্স, বুলেটিন বাের্ড, ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার, ইন্টারনেট প্রভৃতির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যােগাযােগের ক্ষেত্রেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন । বাংলাদেশের সরকার ও আমজনতাও এ থেকে পিছিয়ে নেই, বরং আমরা আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্যে এগিয়ে চলেছি। নতুন প্রজন্ম চেষ্টা করছে প্রযুক্তির এ বাজারে নিজেদেরকে যােগ্য করে গড়ে তুলতে । ইতােমধ্যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘােষণা করেছে। তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মহাখালীতে ৪৭ একর জমির উপর তথ্যপ্রযুক্তি পল্লি' স্থাপিত হয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ২৬৪ একর জমিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। কিছু কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ খােলা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও আমরা অনেক। পিছিয়ে রয়েছি। প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে মােবাইল ফোন একক ব্যবহাকারীর সংখ্যা মাত্র ৬ কোটি ৭০ লাখ । অর্থাৎ এদেশের ৪২ শতাংশ মানুষ প্রকৃত মােবাইল ফোন ব্যবহারকারী। এশিয়ার অনেক দেশে এই হার অনেক বেশি। চীনে প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ মােবাইল ফোন ব্যবহার করে । তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে বিদ্যুৎশক্তি বিরাট ভূমিকা রাখে। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে আমাদের অবস্থান একেবারে পিছনের সারিতে। আমাদের ‘ভিশন ২০২১' বাস্তবায়নে এই মুহূর্তে দৃঢ়প্রত্যয় ও সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়ােজন। বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্য-প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির শীর্ষে পৌছতে হবে ।
Next Post Previous Post